র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট

নওগাঁয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির দাখিল করা ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। রবিবার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ ও তৌফিক সাজওয়ার পার্থ।

প্রতিবেদন সম্পর্কে আদালত বলেন, প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট। প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাকে গ্রেফতারের পর আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছিল কি না— সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে আদালত এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয়।

জানা গেছে, সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র‍্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৯ মার্চ তাকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। তবে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ২৭ মার্চ তা আদালতের নজরে আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করা হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় গ্রেফতারের এখতিয়ার র‌্যাবের আছে কি না তা জানতে চান আদালত। একইসঙ্গে নওগাঁয় র‌্যাবের হাতে আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র‍্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কি না, তাও জানতে চান আদালত।

পাশাপাশি চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে সেসব তথ্যও আদালতকে জানাতে বলা হয়। ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি ও সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত। গত ২৮ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

একইদিন নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল থেকে সুলতানা জেসমিনের সুরতহাল প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী সুলতানা জেসমিন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে নির্যাতন করা হয়নি।

পরবর্তীতে আরেক আদেশে গত ৫ এপ্রিল নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িত র‌্যাব সদস্যদের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কমিটিতে জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়।

তদন্তকালীন সময়ে জেসমিনকে গ্রেফতারের সঙ্গে র‌্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদের দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও গ্রেফতার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের আদেশে পরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

পরে গত ১৩ জুন ওই মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে দুই মাস সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট।

গত ১৪ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ৮ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ৩০২ পৃষ্টার প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করে। এরপর ২০ আগস্ট প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। তখন আদালত বলেন, এই প্রতিবেদনে স্পর্শকাতর বিষয় আছে। আমরা বিস্তারিত পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখবো। এরপর পরবর্তীতে আদেশ দেবো।

আরও পড়ুন- 

স্পর্শকাতর বিষয় আছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো: হাইকোর্ট

র‌্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু: উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ

র‌্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া জেসমিনের মাথায় ও হাতে আঘাতের চিহ্ন

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: কোনও অভিযোগ নেই পরিবারের, করবে না মামলাও

জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে, র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনে নয়: চিকিৎসক