X
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে, র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনে নয়: চিকিৎসক

রাজশাহী প্রতিনিধি
০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:০৯আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:২৯

র‌্যাবের হেফাজতে নির্যাতনে নয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে জেসমিন সুলতানার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় ও ময়নাতদন্ত টিমের প্রধান অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন।

সোমবার (৩ এপ্রিল) ডা. কফিল উদ্দিন জানান, মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। বড় কোনও আঘাত নেই। মাথার কোণে এবং হাতে যে আঘাত পাওয়া গেছে সে আঘাত মৃত্যু হওয়ার মতো নয়।

র‌্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া জেসমিনের মাথায় ও হাতে আঘাতের চিহ্ন

রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তারা ফরেনসিক বিভাগের তিন জন বসেছিলেন। বোর্ড বসিয়ে তারা সেই রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেছেন। তারপর এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। এরপর সেই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন রবিবার বিকালে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আটকের পর মানসিক চাপ থেকেই তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। আর এই কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে আমরা তার শরীরে দুটো জখম পেয়েছি। যা খুবই ছোট। এর একটি কপালের বাঁ পাশে ছোট কাটা। যেটির পরিমাণ ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ এক ইঞ্চিরও কম। এছাড়া ডান হাতের কনুইয়ের ভেতরের দিকে ২ সেন্টিমিটার স্থানে একটি ফোলা জখম ছিল। এটি সাধারণত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীর হাতে ক্যানোলা করার সময় হয়। শরীরের শিরা-উপশিরা খুঁজে না পাওয়া গেলে একাধিকবার সিরিঞ্জিং করা হয়। তখন এই ধরনের সোয়েলিং (ফোলা) হয়। তাই জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত মতামতে আমরা বলেছি, এই যে দুটি ইনজুরি রয়েছে তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়। তার মৃত্যু হয়েছে “শক” (মানসিক চাপ) থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই।’

এর আগে রবিবার (৩ এপ্রিল) বিকালে জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি।

র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে নওগাঁ থেকে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র‌্যাব এই অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্ন জনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।

এদিকে আটকের পর ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। জেসমিনের মৃত্যুর পরদিন ২৫ মার্চ রামেক মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেসমিনের মরদেহ গোসল করানো হয় রাজশাহীতেই। পরে কাফন পরানোর পর মরদেহ কফিনে করে নওগাঁয় নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখানে র‌্যাবের উপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনেরা। এর আগে মৃত্যুর দিন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন নারী সহকারী কমিশনার জেসমিনের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। কিন্তু জেসমিনের শারীরিক অবস্থার অনেক কিছুই সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। ময়নাতদন্তের সময় মর্গে তা খেয়াল করেন সেদিন দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার ডা. তাজনীন জাহান। তারপর তিনিই বিভাগীয় প্রধানকে ডাকেন। তারপর বিভাগীয় প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরেক প্রভাষককে নিয়ে মর্গে যান এবং বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করেন।

জেসমিনের মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ। জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী আল আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল আমিনকে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।

/এমএএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিলেন পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিলেন পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
রাজস্ব সংস্কারের শুরুতেই হোঁচট, বাড়ছে অনিশ্চয়তা
রাজস্ব সংস্কারের শুরুতেই হোঁচট, বাড়ছে অনিশ্চয়তা
পুতিন-জেলেনস্কির সঙ্গে সোমবার কথা বলবেন ট্রাম্প
পুতিন-জেলেনস্কির সঙ্গে সোমবার কথা বলবেন ট্রাম্প
তামিমের ৯ বছর পর ইমনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি
তামিমের ৯ বছর পর ইমনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি
সর্বাধিক পঠিত
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত