পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করে আনসার বাহিনীকে আটক করার ক্ষমতা দিয়ে যে বিল উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা সংবিধান পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপিপন্থি ও সরকারবিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি মনে করি, সরকার আনসার বাহিনীকে পুলিশের মতো সব ধরনের ক্ষমতা দিয়ে আরেকটা ‘রক্ষী বাহিনী’ করতে চায়। আমরা আবেদন জানাবো, আনসারকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দিয়ে যে আইন উত্থাপিত হয়েছে, তা সংবিধান পরিপন্থী। সরকার যখন এই অবস্থায় চলে যায়, তখন মনে হয়, সরকার দেশের মানুষকে জিম্মি করে যেকোনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একটা গ্রেফতারি বাণিজ্য করতে চায়।’’
এদিকে লিখিত বক্তব্যে ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত দুই আইনজীবীকে গত ২৩ অক্টোবর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যায়। সারা রাত তাদের ডিবি হেফাজতে রেখে পরদিন দুপুরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ বা মামলা চলমান নেই। তাদের এভাবে নিজ পেশাগত চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। আইনজীবীরা পেশা পরিচালনায় আতঙ্ক বোধ করছেন। আমরা প্রথমেই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে স্বাধীনভাবে পেশা পরিচালনার স্বার্থে আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সব সভ্য দেশে আদালত প্রাঙ্গণ ও আইনজীবীদের চেম্বারকে বিচারপ্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আইনজীবীর চেম্বার থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের ঘটনায় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ওই গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আইনজীবীরা স্বাধীন পেশা পরিচালনার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করেন। চেম্বার শুধুমাত্র একজন আইনজীবীরই নয়, বিচারপ্রার্থীর জন্যও নিরাপদ স্থান। সেই নিরাপদ স্থান থেকে কোনও ধরনের অভিযোগ ছাড়া দু’জন আইনজীবীকে আটক করার ঘটনা আমাদের দেশে ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের যেভাবে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় হয়রানি করার জন্য গ্রেফতার করা হয়, তারই পুনরাবৃত্তি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এর মূল কারণ দেশে কোনও সুশাসন নেই।’ তিনি বলে আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং তারা একই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় কাজে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। ফলে রাষ্ট্রের এই বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাদারিত্ব হারিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একজন রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করছে। তাদের এই অবৈধ কার্যক্রমের সর্বশেষ শিকার নারায়ণগঞ্জের দু’জন আইনজীবী।’
মহান আইন পেশার সম্মান রক্ষার্থে এর বিরুদ্ধে সব আইনজীবীর প্রতিবাদ গড়ে তোলা জরুরি। একইসঙ্গে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসাসেবে আমরা প্রত্যাশা করবো— প্রধান বিচারপতি এ ঘটনা সম্পর্কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যাতে আইন পেশার সুমহান মর্যাদা সমুন্নত থাকে। দেশের কোনও নাগরিক যেন এভাবে পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার না হন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় বিএনপির ও ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।