ই-সিগারেটের উৎপাদন-বিজ্ঞাপন বন্ধে আইনি নোটিশ

বাংলাদেশে ই-সিগারেটের উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, বিক্রয়, বিজ্ঞাপন ও এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ছয় জনকে রেজিস্টিকৃত ডাকযোগে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।‌

সোমবার (১৩ নভেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন ল' অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির এই আইনি প্রেরণ করেন।

নোটিশে বলা হয়েছে, সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট আজকাল তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত যন্ত্রের ভেতর একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। তার মধ্যে ভরা থাকে বিশেষ ধরনের তরল মিশ্রণ। যন্ত্রটি গরম হয়ে ওই তরলের বাষ্পীভবন ঘটায় এবং ব্যবহারকারী সেই বাষ্প টেনে নেন ফুসফুসে, যা ধূমপানের অনুভূতি দেয়। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ভেপিং’।

তরল মিশ্রণটি বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধ যুক্ত হওয়ায় তরুণ সমাজ আগ্রহ নিয়ে ই-সিগারেট ব্যবহার শুরু করেছে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, ই-সিগারেটের যন্ত্রের আধুনিক স্টাইলের কারণে তরুণ সমাজ মনে করছে এ সিগারেট ব্যবহার এক ধরনের স্মার্টনেস। অতি দ্রুত আমাদের তরুণ সমাজ ই সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে যেটি খুবই উদ্বেগজনক।

আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণার বরাত দিয়ে এতে আরও বলা হয়, ই-সিগারেটে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত। কণ্ঠনালি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফ্লেভারিং এজেন্টের কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। শুধু তা-ই নয়, ই-সিগারেটের নিকোটিন গর্ভজাত শিশু মেধা বিকাশ ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভয়ানক বিপজ্জনক। সিগারেটের ধোঁয়া এবং যন্ত্রে রক্ষিত লিকুইড শিশুদের জন্য হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত ভয়ংকর। এটি ব্যবহারকারী তথা অন্যদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মতে, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, চায়না, ভুটান, হংকং, জাপান, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ভুটান, ইন্ডিয়া সহ বিশ্বের অন্তত ৪৭ টি দেশ এই সিগারেটের উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আরও বহু সংখ্যক দেশে নিষিদ্ধ প্রক্রিয়া চলমান। 

বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ই-সিগারেটের বাজারজাত, আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্যিকীকরণ, বিজ্ঞাপন এবং ব্যবহার বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, ইউটিউব, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, লিংকইন, টুইটার এবং অনলাইন কোম্পানি দারাজ, ইবে, ই-শপ সহ সকল মাধ্যমে ই-সিগারেটের বাণিজ্যিকীকরণ বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে ই-সিগারেট বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।