রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না থাকায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হচ্ছে না

রাজনৈতিক অঙ্গীকার নেই বলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের নতুন সংশোধন পাস হচ্ছে না বলে মনে করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও আমাদের করণীয়’ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।

শ্যামল দত্ত বলেন, আইন পাসে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও রাজনৈতিক অঙ্গীকার নেই। যদি থাকতো, তাহলে অনেক আগে পাস হয়ে যেতো। সরকারের মধ্যে তামাকের পক্ষে লোকের সংখ্যা বেশি। আমি যখন সংসদে কাজ করেছি, তখন দেখেছি যে তামাকের পক্ষে লবিং খুবই শক্ত। সুতরাং সেখানে আইন পাস হবে কীভাবে!

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত আইন পাস করে কী হবে? আগে যে আইন ছিল সেটার কি প্রয়োগ হয়েছে? শিশুদের কাছে তামাক পণ্য বিক্রি করবে না, প্রকাশ্যে ধূমপান করা যাবে না, এগুলো তো আগের আইনেও ছিল। সেগুলোর প্রয়োগ কেউ দেখেছে? আমি মনে করি আইন দিয়ে কিছু হবে না। সামগ্রিক অর্থে তামাককে নিরুৎসাহিত করতে না পারলে এবং সেটি যদি রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ না হয়, তাহলে আইন করে কোনও লাভ হবে না। আইন প্রয়োগের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমন্বয়ক নাছরিন আকতার।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার।

তিনি বলেন, আইনটি মন্ত্রিপরিষদ থেকে আরও অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে, সুতরাং আমাদের আগের অবস্থান থেকে কাজ করার সুযোগ আছে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হলে এটি পাসের জন্য পুনরায় পাঠানো হবে। আমরা আশাবাদী আইনটি পাস হবে।

শাহীন আকতার ডলি বলেন, বর্তমানে তরুণরা ই-সিগারেটের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু তা-ই নয়, বন্ধ করতে হবে সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি। পাশাপাশি তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে বৃদ্ধি করা এবং বিক্রয় স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।

সভায় ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, রাশিয়ায় ধূমপানকে অনেক কঠিন করা হয়েছে। সেখানে নিজে বাসাবাড়ি ছাড়া ধূমপান করার তেমন কোনও সুযোগ নেই। প্লেনের ভেতরে ধূমপানের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। এখন প্লেনে উঠলে কেউ চিন্তা করতে পারে না যে একসময় প্লেনের ভেতর ধূমপান করা যেতো। কিন্তু শপিংমলসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় ভ্যাপ নিচ্ছে। এর কারণ কী? কারণ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে নতুন নতুন বিকল্পের দিকে। আজ যদি শলাকার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হয়, অন্যদিকে বাজারটিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। এটা তারা করবেই কারণ এটা ব্যবসা। নীতিগত জায়গায় কিন্তু অনেক কিছু বলা হয় কিন্তু বাস্তবে কাজ কতটুকু হচ্ছে, সেটি চোখ-কান খোলা রাখলেই বোঝা যায়।

তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপকৌশলে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা জানান নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ঢাকা ব্যুরো প্রধান এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জুলহাস আলম।

তিনি বলেন, এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানা রকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপকৌশল ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) পরিচালক (অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ) শাহ শেখ মজলিশ ফুয়াদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ বেগম পলি, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, হেলথ রিপোর্টারস ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সমকালের প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া, কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা, এডভোকেসি ম্যানেজার আতাউর রহমান প্রমুখ।