কমিটি নির্ধারিত সময় বুধবার (৭ মে) টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধে কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ বকেয়া পরিশোধে না করায় আবারও শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ কবরেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। সোমবার (১২ মে) ওই সমাবেশ করা হবে।
শনিবার (১০ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বিজয়নগর শ্রম ভবনের সামনে এক সম্মেলনে টিএনজেড গ্রুপের আন্দোলনরত শ্রমিকরা এ কথা জানান। ‘বকেয়া পরিশোধ না করে মালিকপক্ষের প্রতারণা এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা’র প্রতিবাদে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা বলেন, জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে রবিবার (১১ মে) গাজীপুরে বিক্ষোভ গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (১২ মে) শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবো আমরা। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে লাগাতার অবস্থানসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আমরা গত দুই মাস ধরে ঈদ বোনাস, সার্ভিস বেনেফিটস ও যাবতীয় বকেয়া পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর এবং ঢাকায় আন্দোলন করে আসছি। গাজীপুরের রাস্তা অবরোধসহ ঈদের আগে রমজান মাসে টানা সাত দিন শ্রম ভবনে অবস্থান কর্মসূচি করি। সেই সময় তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসসহ যাবতীয় বকেয়ার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকারের উদ্যোগে গত ২৯ মার্চ ঈদের একদিন আগে মালিকপক্ষ অনুমানিক ১৭ কোটি পাওনার বিপরীতে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু মালিকপক্ষ সেই প্রতিশ্রুতিও যথাযথাভাবে রক্ষা করেনি। ৩ কোটির ওয়াদা করেও তারা দেওয়ার সময় অনুমানিক ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেয়। সেই টাকা পেতেও আমাদের নানারকম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
তারা আরও বলেন, মালিকপক্ষের প্রতারণা সত্ত্বেও সেদিন সরকারের ভূমিকা আমাদের আশান্বিত করেছিল। ২৯ মার্চের বৈঠকে শ্রম সচিব বলেছিলেন, মে দিবসের আগে সব শ্রমিক যেন বকেয়া পায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রম সচিবের বক্তবের প্রতি সম্মন রেখে ২৯ মার্চ আমরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করি। সেই ধারাবিকতায় যাবতীয় পাওনা পরিশোধের জন্য ৮ এপ্রিল শ্রম সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় (সরকারপক্ষ-মালিকপক্ষ-শ্রমিকপক্ষ) বৈঠকে অংশগ্রহণ করি এবং সিদ্ধান্তগুলো মেনে নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই বৈঠকে কোনও পূর্ব নোটিশ ছাড়াই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ওই পরিস্থিতিতে যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ এবং মালিকের আস্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাবের জন্য অতিরিক্ত শ্রম সচিবের নেতৃত্বে একটি ত্রি-পক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির ২২ এপ্রিলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পাওনা ৭ মে পরিশোধের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় মালিকপক্ষ। সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথা তদারক করা হবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়। নির্ধারিত দিন অতিবাহিত হলেও পাওনা টাকা আমরা পাইনি। কমিটির তরফ থেকেও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্টভাবে কোনোকিছু জানানো হয়নি।
শ্রমিকরা বলেন, নির্ধারিত সময়ে বকেয়া পরিশোধ না করায় ওইদিন কারখানার সামনে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করি এবং ৮ মে অবোরধ কর্মসূচি ঘোষণা করি। পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে শিল্প পুলিশ বাধা দেয় এবং হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রনেতা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, শ্রমিক প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম, নিখিল দাস, রুবিনা, অর্চনা রানী, সামিউল, সাদ্দাম, তোফাজ্জোল হোসেন, আশরাফুল, সীমা আক্তার, জুনায়েদ, মাসুম, সাফিলা বেগমসহ ২০ জনের বেশি আহত হন। আমরা এই নিপীড়নের তদন্তসাপেক্ষ সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এতোদিন সরকারের উদ্যোগ আশ্বস্ত করলেও এখন সরকারের ভূমিকা আমাদের মনে নানা সংশয় জন্ম দিচ্ছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, পাওনা পরিশোধে চুক্তিবদ্ধ হয়েও মালিকপক্ষের পুনরায় যে প্রতারণা করলো, সেই দায় সরকারকে নিতে হবে। কারণ সরকারের আশ্বাসে শ্রমিকরা ঈদের আগে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিল। আগামী ২০ মে পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে মালিকপক্ষ থেকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের উড়ো নোটিশের ওপর আমাদের আস্থা নেই। বেতন-বোনাসসহ যাবতীয় পাওনা আমরা সরকারের মাধ্যমে নিতে চাই।