দুবলার চরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করলো র‌্যাব

র‌্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ইতোপূর্বে র‌্যাবই সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করে সুন্দরবন ও এর আশেপাশের এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন দুবলার চরবাসীদের জন্য বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে পুনরায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো র‌্যাব।

রবিবার (২৬ নভেম্বর) সুন্দরবনের দুবলার চরে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সংকট নিরসনে র‌্যাবের স্থাপিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যাণ্টের  উদ্বোধনী ফলক উম্মোচন করে র‌্যাব মহাপরিচালক এ কথা বলেন।

মহাপরিচালক বলেন, ‘স্থাপিত এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে এখন থেকে পুণ্যার্থী, পর্যটকসহ লক্ষাধিক জনসাধারণ বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সুবিধা ভোগ করবে। দুবলার চরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে এখানকার মৎস্যজীবীসহ অন্যান্য পেশাজীবী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ব্যবসায়ী, প্রতিবছর রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী, পর্যটক ও সাধারণ মানুষজনের বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সংকট নিরসন ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে। উন্নতমানের এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে প্রতি দিন গড়ে ২৪ হাজার লিটার পানি পরিশোধন করা যাবে। যা ১৫টি ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টের মাধ্যমে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।’

র‌্যাব জানায়, দুবলার চরে রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী, পর্যটকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও স্থানীয়রা বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতো। এ কারণে রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী, পর্যটকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও স্থানীয়দের চিকিৎসা-সহায়তা প্রদানের জন্য র‌্যাবের  মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। মেডিক্যাল ক্যাম্পে পুণ্যার্থী, পর্যটক, বিভিন্ন পেশাজীবীসহ দুবলার চরের স্থানীয়দের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেবা প্রদান ও ওষুধ সরবরাহ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন র‌্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। পরে র‌্যাব মহাপরিচালক দুবলার চরে নির্মণাধীন র‌্যাব ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ১ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। র‌্যাবের অভিযানে সুন্দরবন সম্পূর্ণ দস্যুমুক্ত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর   সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করার ঘোষণা দেন।

আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে এসে পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রত্যেককে নগদ এক লাখ টাকা, র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে নগদ ২০ হাজার টাকা ও একটি করে মোবাইল দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আত্মসমর্পণকারীদের মাঝে ১০২টি ঘর, ৯০টি মালামালসহ মুদি দোকান, ২২৮টি গবাদি পশু, ১২টি মাছ ধরার নৌকা ও জাল, ৮টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে উপহার সামগ্রী, শীতবস্ত্র বিতরণ ছাড়াও করোনাকালীন এবং বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়েও তাদের সহায়তা প্রদান করা হয়।

এছাড়া জলদস্যুদের পূর্ববর্তী দক্ষতা অনুযায়ী এবং ক্ষেত্র বিশেষে নতুন করে সরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে নতুন নতুন কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে সহায়তা করা হয়। র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে জলদস্যুদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে ‘সুন্দরবনের হাসি’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সেলাই, ড্রাইভিংসহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা করা হচ্ছে।