বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিকনেতা নজরুল ইসলাম খান মন্তব্য করে বলেছেন, কোনও শ্রমিক তার উপার্জনস্থল কারখানায় আগুন দেয় না। আগুন দেয় তারা, যারা শ্রমিকদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চায়। যারা আমার-আপনার পক্ষে লড়াই করবে, কথা বলবে, তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি) আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
শ্রমিক হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, কর্মচ্যুতদের পুনর্বহাল, গ্রেফতার শ্রমিকদের মুক্তি, পোশাকশিল্প ঘোষিত মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাহার এবং ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তারা নাকি কারখানায় আগুন দিয়েছে। কোনও শ্রমিক তার উপার্জনস্থলে, কারখানায় আগুন দেয় না। আগুন দেয় তারা, যারা শ্রমিকদের আন্দোলনকে আগুন দিয়ে নস্যাৎ করতে চায়। যারা শ্রমিকদের নির্যাতন করে, তাদের বিরুদ্ধে কখনও তদন্ত হয় না। আর হয় না বলেই কখনও প্রকৃত অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসে না।
তিনি বলেন, যখনই শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করে, তখনই তাদের সে আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যখন তারা ন্যায্য মজুরির কথা বলে, তখন তাদের ভয় দেখানো হয়। বলা হয়, মজুরি বাড়ালে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু অতীতে মজুরি বাড়লেও কখনও কোনও কারখানা বন্ধ হয়নি। বরং যাদের কারখানা ছিল একটি, তাদের এখন দুই-তিনটি হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাব মেটেনি। কারণ মজুরি যে পরিমাণ বাড়ে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে দ্বিগুণ। বাড়ি ভাড়া, স্কুলের ও ছেলেমেয়েদের খরচ, চিকিৎসা খরচ বাড়ায় তাদের অভাব আর মেটে না।
মজুরি নিয়ে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে যে মজুরি বাড়ানো হলো, তারপর থেকে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এখন যদি সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যায্য হয়, তবে কিছুদিন আগে যেটা ন্যায্য ছিল, সেটা তো ন্যায্য নয়। ডলারের দাম বাড়ায় রফতানিকারক ও শিল্পপতিরা যে পরিমাণ মুনাফা করেছে, ওই মুনাফা দিয়ে আগামী কয়েক বছর শ্রমিকদের অন্তত ২০ হাজার টাকা করে মজুরি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা দেবে না। কারণ তারা মুনাফার ভাগ দিতে চায় না।
কারাবন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আজ যারা আন্দোলন করছে, তাদের গ্রেফতার করে রাখা হচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যারা লড়াই করছিলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সব নেতাকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। যারা আমার-আপনার পক্ষে লড়াই করবে, কথা বলবে, তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা তাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক এ এ এম ফয়েজ হোসেন, নির্বাহী সমন্বয়ক আব্দুর রহমান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।