ইস্তেখারার নামাজ কী, কখন পড়তে হয়?

ইসলাম ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে ও কোন সিদ্ধান্ত তার জন্য কল্যাণকর হবে এবং কীভাবে বিষয় নির্বাচন করবে- এ ব্যাপারেও ইসলামের সুন্দর দিক-নির্দেশনা রয়েছে।

কখনও যদি কারও মধ্যে কোনও কাজ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সংশয় বা দোদুল্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয় যে- এ কাজ করবো কি করবো না, ইসলাম তখন ইস্তেখারার নামাজ পড়ার নির্দেশনা দিয়েছে।

হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহর আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করে বলেন, রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবিদের সব বিষয়ে ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন; যেভাবে তিনি তাদের কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন।

তিনি বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনও কাজের উদ্যোগ নেয়, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে। অতঃপর এই দোয়া পড়ে-

আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্তাখিরুকা বি ইলমিকা ওয়াস্তাকদিরুকা বি কুদরাতিকা; ওয়া আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকাল আজিম। ফাইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু; ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন্কুন্তা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা খাইরুন-লি ফি দ্বীনি, ওয়া মাআশি ওয়া আ-ক্বিবাতি আমরি (অথবা বলবে: আ’ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি); ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লি, সুম্মা বারিকলি ফি-হি; ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা শাররুন লি ফি দ্বীনি ওয়া মাআশি ওয়া আ-ক্বিবাতি আমরি (অথবা বলবে- আ জিলি আমরী ওয়া আজিলিহি); ফাসরিফহু আন্নি- ওয়াসরিফনি আনহু, ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মারদ্বিনি বিহি। (যখন هَذَا الْأَمْرَ  পড়বে, তখন উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল করতে হবে)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা, আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত।

হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর হলে, আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন।

হে আল্লাহ! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৮২-৬৮৪১)

হাদিস শরিফে আরও এসেছে- যেকোনও কাজ পরামর্শ করে করলে লজ্জা ও অনুশোচনার সম্মুখীন হবে না এবং আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ভালো-মন্দ জেনে নেওয়ার জন্য ইস্তেখারা করলে ব্যর্থ হবে না। ইস্তেখারার মাধ্যমে নিজের পালনকর্তার কাছ থেকে ভালো-মন্দ জেনে না নেওয়া নিজের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়।

স্মরণ রাখা দরকার যে, ইস্তেখারার সময় কোনও স্বপ্ন দেখা আদৌ জরুরি নয়। বরং সোজা কথা এই যে, অন্তরে যে বিষয়টি প্রবল মনে হয়, সেটিই করতে হবে। যদি কোথাও কারও বিবাহের প্রস্তাব পাঠাতে হয় কিংবা নিজের বিবাহ করতে হয় বা সফরে যেতে হয় অথবা অন্য যে কোনও কাজ করতে হয়, তখন ইস্তেখারা করতে হবে, মুমিনের কাজগুলো ইস্তেখারার সাথেই করা উচিৎ। যদি এমনটি করা হয়, তাহলে আশা করা যায়- কখনও কোনও কাজ করে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভোগে পড়তে হবে না ইনশাআল্লাহ।

আল্লামা শামী (রহ.) হজরত আনাস (রা.) আন্হুর বর্ণনায় ইস্তেখারার নামাজ সাতবার পড়ার কথা লিখেছেন। অর্থাৎ শুরুতে যদি সন্দেহ-সংশয় দূর না হয়, তাহলে সাত দিন পর্যন্ত ইস্তেখারা করতে হবে। যদি ধারাবাহিকভাবে সাত দিন পড়াও মুশকিল হয়ে পড়ে, তবে একসঙ্গে দুই রাকাত করে সাতবার নফল নামাজ পড়লেও ইস্তেখারা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতি দুই রাকাতের শেষে সালাম ফিরিয়ে উপরোল্লিখিত দোয়া পড়তে হবে। (খাযায়েনে কোরআন ও হাদিস, পৃষ্ঠা : ৭০-১২-৭২)

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা