নির্বাচনের আগে ‘বড়দিন’ ও ‘থার্টি ফার্স্টে’ কী সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে?

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে এই নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিল, সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরসহ চলছে নানা নাশকতা।

অন্যদিকে সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতার খবরও উঠে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে এখনও তৎপর জঙ্গিরা, তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না তারা। এ বিষয়গুলো যখন চলমান ঠিক সেই মুহূর্তেই দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর উদযাপন হবে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। এই দুটি দিনকে ঘিরে বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

একদিকে জাতীয় নির্বাচন, অন্যদিকে নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপির অবরোধ হরতালের মতো কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতার ঘটনা প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা অনলাইনে গুজব সৃষ্টি করে কেউ যেন কোনও ধরনের অশান্তি ছড়ানোর সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে আগে থেকেই সাইবার মনিটরিং জোরদার রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।

সম্প্রতি অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) অভিযানে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’-এর সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানো। যদিও জঙ্গির সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুধু ‘আল্লাহর দল’-ই নয়,  নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’, ‘আনসার আল ইসলাম’, ‘হিজবুত তাহরীর’-এর বেশ কয়েকজন সদস্যকেও এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দাবি করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, চলমান অবরোধ-হরতালের কথা মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির ওপরও কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। কোথাও যেন কেউ কোনও অপ্রীতিকর কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। তবে অবরোধকে কেন্দ্র করে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা গেলেও এরকম নাশকতা ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই বড়দিন ও থার্টি ফার্স্টকে কেন্দ্র করে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ সতর্করা।

ধর্মীয় উৎসব বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে বাইরে কোথাও কোন ধরনের অনুষ্ঠান করা যাবে না। এছাড়া সমবেত হওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। এদিন রাজধানীর বারগুলো বন্ধ রাখা হবে। মাতাল হয়ে কেউ যেন গাড়ি চালাতে না পারে, সে ব্যাপারেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেকপোস্ট পরিচালনা করবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং বড়দিনকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে যেকোনও অপপ্রচার রোধে সাইবার মনিটরিং জোরদার রয়েছে।

সম্প্রতি থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং বড়দিনের নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চায়। সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনী যথাযথ কাজটি করছে। নাশকতার কারণে বা সন্ত্রাসের কারণে নির্বাচন বন্ধ থাকবে না। নির্বাচন সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছর বড়দিন এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে বাড়তি সতর্কতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। তারা প্রতিনিয়ত তথ্য আপডেট করছেন। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলমান হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে নাশকতার ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে কেন্দ্র করে উন্মুক্ত স্থানে যেকোনও সমাবেশ প্রতিরোধের বিষয়ে এবার কঠোর থাকবে পুলিশ।