এডিটর গিল্ডসের গোলটেবিল বৈঠক

‘বিএনপি না আসায় প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ’

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নানা চ্যালেঞ্জ আছে। এবারের নির্বাচনের পরিবেশ যেকোনও সময়ের চেয়ে অন্যরকম। অপরদিকে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় প্রতিযোগিতামূলক হওয়াও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) এডিটর গিল্ডস আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। আজকের বৈঠকে বিষয় ছিল ‘নির্বাচনের বন্ধুর পথ’। 

আলোচনায় ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম  বলেন, ‘পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সহিংসতার দিক থেকে সামরিক কিংবা আধা সামরিক সমর্থিত সরকারের সময় নির্বাচনি পরিবেশ মসৃণ থাকে। কারণ,  তখন একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থাকে। এখন গণতান্ত্রিক সরকারের সময় প্রতিযোগিতা থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশে কিন্তু নির্বাচনে সহিংসতার পরিমাণ আমাদের দেশের থেকে অনেক বেশি। এখন এই বাস্তবতায় আমরা কি সেনা-সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই? নিশ্চয়ই না। কারণ, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জনগণ। তাদের ভোটাধিকার তারা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে পারবে। সেখানে সহিংসতার পরিমাণ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে। এবারে বাংলাদেশে নির্বাচনের পথটা বন্ধুর না। এখন পর্যন্ত ওই অর্থে সহিংসতা হয়নি, কিন্তু এবারের পরিবেশ অন্যরকম।’

টিবিএন ২৪-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল আশরাফ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বের চাপ আওয়ামী লীগের জন্য এক ধরনের কঠোরতা। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না— এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র চলে সংবিধানের শাসনে। বিএনপির যে ট্র্যাক রেকর্ড আমরা দেখছি গত ১০ বছরে, সেখানে দেখা গেছে— তারা সুপ্রিম কোর্ট মানে না, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা মানে না। ওনারা যদি তা মানতো তাহলে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় এসে জনগণকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতো। তারপর সংসদে গিয়ে তারা কথা বলতে পারতো। তাদের যদি সরকার ব্যবস্থার প্রতি বড় ধরনের অভিযোগ থাকতো— তাহলে সংসদে গিয়ে সেটা তুলে ধরা আরও যৌক্তিক উপায় ছিল। তারা তা না করে জঙ্গিবাদের মূলে চলে গেছে। এমনকি ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম এবং আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তাদের কিছু সাপোর্ট নিয়ে মানুষকে আস্থার জায়গায় না নিয়ে— একটা নৈরাজ্য তৈরি করতে চাচ্ছে।’    

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন নাটকের অবতারণা হচ্ছে। নতুন নতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে। দুই-তিন মাস আগে আমরা যা দেখতাম, এখন বিষয়গুলো অন্যরকম হয়ে গেছে। শুধু একটি জিনিস পাল্টায়নি— সেটা হচ্ছে খেলোয়াড় একজনই। সুতা একজনের হাতেই এবং সেই নাটক খেলা হচ্ছে। এখানে বিরোধী রাজনীতি একটা ফ্যাক্ট, কিন্তু দুঃখের বিষয় যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলন করতে চাচ্ছে। এখানে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এজেন্ডা কী, আমি জানি না।’

আলোচনায় আরও  অংশ নেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী খুশি কবীর, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান।