রাজউকের পাওনা ৩০০ কোটি টাকা দিচ্ছে না দুই সিটি করপোরেশন

১৯৮৩ সালে তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে ২৭ কোটি টাকায় ৯টি মার্কেট বিক্রি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর মার্কেট বুঝে নিলেও এ বাবদ পাওনা টাকা রাজউককে বুঝিয়ে দেয়নি সিটি করপোরেশন। গত চল্লিশ বছরে সুদসহ বেড়ে বর্তমানে এ টাকার পরিমাণ ৩০২ কোটি। পাওনা টাকা ফেরত পেতে বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি) অসংখ্যবার চিঠি দিয়েও কোনও ফল পায়নি রাজউক।

কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বাংলাদেশ (সিএজি) প্রকাশিত রাজউকের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে এ অনিয়ম নিয়ে আপত্তি তুলেছে সিএজি কর্তৃপক্ষ। সিএজি জানিয়েছে, ৯টি মার্কেট বিক্রয় ও হস্তান্তর বাবদ সিটি করপোরেশনের কাছে পাওনা টাকা আদায় না হওয়ায় সুদসহ কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩০২ কোটি ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৬ টাকা।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের কাছে বিক্রি করা মার্কেটগুলোর মধ্যে বর্তমান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় আছে গুলশান সাউথ মার্কেট, যার বিক্রয় মূল্য ছিল ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, গুলশান নর্থ ডিআইটি মার্কেট, যার বিক্রয় মূল্য ছিল ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা, গুলশান কাঁচাবাজার মার্কেট, যার বিক্রয়মূল্য ছিল ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, কাওরান বাজার মার্কেট কমপ্লেক্স, যার একাংশের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং আরেকাংশের ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতায় থাকা মার্কেটগুলো হলো— ডিআইটি সুপার (সাকুরা) মার্কেট, যার বিক্রয়মূল্য ছিল ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, ভিক্টোরিয়া ডিআইটি মার্কেট, যার বিক্রয়মূল্য ছিল ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, মিউনিসিপ্যালিটি স্ট্রিট মার্কেট, যার বিক্রয়মূল্য ছিল ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, বাদামতলী ঘাট ডিআইটি মার্কেট, যার বিক্রয়মূল্য ছিল ৩৯ লাখ ৭ হাজার টাকা এবং নওয়াব ইউসুফ মার্কেট, যার বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে সিটি করপোরেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ৯টি মার্কেট ২৭ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ২২২ টাকায় বিক্রি করে রাজউক। মার্কেট ক্রয়ের পর টাকা পরিশোধ না করেই মার্কেটগুলো রাজউকের কাছ থেকে বুঝে নেয় সিটি করপোরেশন। তখন থেকে এসব মার্কেটের যাবতীয় আয় জমা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের কোষাগারে। রাজউকের হিসাবে বর্তমানে সুদসহ তাদের পাওনা ৩০২ কোটি ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৬ টাকা। তবে এই ৯টি মার্কেটের বকেয়া বিবরণীতে রাজউক সুদ হার বা সুদ নিরূপণের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আবু কাওছার মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুই সিটি করপোরেশনকে আমরা বারবার চিঠি দিলেও তারা এ বিষয়ে কোনও সুরাহা করতে আগ্রহী নয়। রাজউক থেকে অনেকবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ডাকলেও তারা কেউ আসেননি। সবশেষ ২০২২ সালে তাদের চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত চিঠির কোনও জবাব দেয়নি তারা। কাওছার মল্লিক জানান, বর্তমানে রাজউকের দফতরে থাকা ফাইলগুলোর মধ্যে এই মার্কেটগুলোর ফাইলই সবচেয়ে বড়।

এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ পাওনা পরিশোধের বিষয়ে তারা ইতিবাচক বলে জানা গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। রাজউক যদি আমাদের কাছে টাকা পায়, সেটা যদি তাদের ন্যায্য পাওনা হয় তাহলে আমরা ভেবে দেখবো। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও রাজউকের মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, চিঠি দিয়েছিল কিনা সেটি নথি দেখে বলতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মুনিরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার আদেশ দিয়েছি। বিস্তারিত জানার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও রাজউকের মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হককে একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি।