‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে পাহাড়ের মানুষকে এখনও লড়াই করতে হচ্ছে’

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পাহাড়ের মানুষকে এখনও লড়াই করতে হচ্ছে। ওই সময় যে সরকার পার্বত্য চুক্তি করেছিল, সেই সরকারই টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। কিন্তু তাদের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা এই চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংহতি সভায় এসব কথা বলেন ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। এ চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য দেশের প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর এই প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করে।

তারেক বলেন, পাহাড়ের মানুষকে এখনও এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। এই সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি, হয় আপনারা বলেন কবে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন, নতুবা বলেন কেন এই চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়ক জাকির হোসেন বলেন, পার্বত্য চুক্তি পূরণ হলে আমরা পাহাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখতাম। কিন্তু সেটার বদলে আমরা দেখছি পার্বত্য চুক্তির মূল ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই আমরা নাগরিক সমাজ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোসহ বৃহত্তর পর্যায়ে এই চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুললাম।

সংস্কৃতি কর্মী শাহেদ কায়েস বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে পাহাড়ে একধরনের শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতি চলছে। সেখানে এখন পর্যন্ত জুম চাষের মাধ্যমে ভূমি হারাচ্ছে। এ ছাড়া বান্দরবানের রাবার কোম্পানি থেকে শুরু বিভিন্ন কোম্পানি পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করছে। আমরা আশা করেছিলাম এই চুক্তির ফলে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে কিন্তু তা হয়নি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষে যারা চুক্তি করেছিল, তারা যে এটি বাস্তবায়ন করবে, সেটা আশা করা যাচ্ছে না। কেননা, এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রথমেই রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্য থাকতে হবে। কিন্তু যে দলটি করেছিল, তাদের যে রাজনৈতিক দর্শন আমার মনে হয় না তারা দলীয়ভাবেও একমত ছিল।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সরকার চুক্তি করেছে চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য। পাহাড়ে অঘোষিত সেনাশাসন জারি রয়েছে। কিন্তু সরকার তার প্রচারযন্ত্রের মধ্য দিয়ে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে। সরকার বলছে পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের যে আন্দোলন, সেটার অনুপস্থিতি দেখি আমি। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে এই চুক্তি বাস্তবায়নের প্রকৃত চিত্র জনগণের সামনে নিয়ে যাওয়া।

প্ল্যাটফর্মটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বের এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সভাপতি সুলভ চাকমার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য শরিফ সমশির, সাবেক সাংসদ ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রমুখ।