বাঁধভাঙা উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ

আছে বিধিনিষেধ। তবু নববর্ষ বলে কথা! স্মৃতির পাতায় নানা ঘটনায় জায়গা করে নেওয়া ২০২৩ সালকে বিদায় জানিয়ে স্বাগত জানানো হলো ২০২৪-কে। খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে উদযাপন করলো রাজধানীবাসী; যেন কোনও কিছুই আটকাতে পারেনি তাদের। নানা আয়োজনে বরণের মধ্য দিয়ে সূচনা হলো নতুন বছরের। কালের সাক্ষী হওয়া ঢাকার তরুণরা বলছেন সুন্দর আগামীতে নির্ভার আশার কথা।

ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছোঁয়ার আগেই আতশবাজি আর ফানুসে আলোকিত হয় রাজধানীর আকাশ। বিধিনিষেধের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন বাসার ছাদে বসেছে রাঙা মঞ্চ। আতশবাজির শব্দের সঙ্গে তরুণদের উন্মাদনার পাশাপাশি আকাশে রঙিন ফানুসের দুলুনি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। এই উৎসব থেকে বাদ যায়নি শিশু-কিশোররাও। ছেলেদের থেকে পিছিয়ে ছিল না মেয়েরাও। তারুণ্যের বাঁধভাঙা উল্লাসে শুরু হলো ‘২০২৪’।

ছবি: আসাদুজ্জামান শাওন

সোমবার (১ জানুয়ারি) প্রথম প্রহরে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী আর ধানমন্ডি এবং উত্তরা, বাড্ডা, বসুন্ধরা, বারিধারা, রামপুরা, মগবাজার, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, পল্টন, মতিঝিল ও ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় নানা আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করার খবর পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিধিনিষেধের কারণে যাবতীয় আয়োজনই বাড়ির ছাদে সীমাবদ্ধ ছিল।

ছবি: আনোয়ার পারভেজ হালিম

রবিবার সন্ধ্যা থেকেই মূলত খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়। আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর পাশাপাশি ছাদমঞ্চে বারবিকিউ পার্টি, কেক কাটাসহ ছিল নানা খাবারের আয়োজন। খাবারের পসরা সাজিয়ে আনা হয় ভিন্নতা। মতিঝিলের সরকারি কর্মচারী কলোনিতে প্যান্ডেল করে রান্নার আয়োজন করা হয়। এদিন ফুলের দোকানেও ভিড় দেখা যায়। রাত পর্যন্ত চলে ফুল বিক্রি। এসব দোকানে কিশোর ও তরুণদের ভিড় ছিল বেশি। তারা পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব মিলে উদযাপন করছে নববর্ষ।

ছবি: সঞ্চিতা সীতু

গুলশান ১ নম্বরের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাঙালির নববর্ষ দুটি। প্রথমটি পয়লা বৈশাখ আর দ্বিতীয়টি ১ জানুয়ারি। দুটি দিনই নানা আয়োজনে উদযাপনের মধ্য দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছি আমরা। এর মধ্য দিয়ে নিজে ভালো থাকার এবং সবাইকে ভালো রাখার আশা প্রকাশ করে দেশের তরুণ সমাজ।

ছবি: হিটলার এ. হালিম

ধানমন্ডিতে বসবাস করা কলেজপড়ুয়া আলী আসিফ সিদ্দিকী বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির ছাদে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ বরণের আয়োজন করেছেন। তাদের আয়োজন দেখে বোঝার উপায় নেই যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে জানতে চাইলে আলী আসিফ বলেন, বিধিনিষেদের আগের সময় বন্ধুরা মিলে টিএসসিতে গিয়ে বর্ষবরণ করতাম। কিন্তু এখন বিধিবাম! তাই রাত সাড়ে ১১টার আগেই বাড়ির ছাদে সবাই মিলে নববর্ষ বরণের আয়োজন করে আসছি কয়েক বছর ধরে। অনেক ফানুস ও বাজি কিনে ফুটিয়েছি। এতে আমরা মজা করলেও উন্মুক্ত স্থানে মুক্ত পরিবেশে মুহূর্তটিকে উদযাপন করতে চাই।

ছবি: হিটলার এ. হালিম

রামপুরার বনশ্রীতে থাকা শান্তা মরিয়াম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিধিনিষেধের কারণে ভাড়া বাড়ির ছাদে আমার ভাইদের সঙ্গে বর্ষবরণের উৎসবে শামিল হয়েছি। ছোট ছেলে-মেয়েরাও এই আনন্দে শামিল হয়েছে। আমরা সবাই কেক কেটেছি, নানা খাবারের আয়োজনও ছিল। অনেক আনন্দ করেছি আমরা। নতুন বছরটা সবার ভালো কাটুক, সেটাই আমাদের চাওয়া।

ছবি: হিটলার এ. হালিম

মতিঝিল এজিবি কলোনির আকাশ হাসান, জুলফিকার আহমেদ ও হাসানুল বান্না বলেছেন, প্রশাসনের বিধিনিষেধ থাকলেও আমরা সীমিতভাবে হলেও নতুন বছরকে বরণ করেছি। বন্ধুরা মিলে বাড়ির ছাদে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করেছি। নতুন বছরের প্রথম প্রহরটি বেশ ভালো কেটেছে, পুরো বছরটি আমরা আনন্দে থাকতে চাই।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

বর্ষবরণের এ আয়োজন যে কেবল তরুণদেরই ছুঁয়ে গেছে, তেমনটি নয়। তার প্রমাণ শান্তিনগরের বাসিন্দা গুলজার বেগম (৭৯)। বয়সে আটকে না থাকা এই বৃদ্ধ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিবছরই আমরা কেক কেটে, নানা ধরনের মজার মজার খাবার রান্না করে, নিজেদের মধ্যে উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন বছরের উদযাপন করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফুল কিনে, কেক কিনেই উদযাপন করেছি রাতের প্রথম প্রহর।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বজন, প্রিয়জন, সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নেটিজেনরা। এ সময় ২০২৩ সালের সব দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন বছরের নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনায় এগিয়ে চলার কথাও বলেছেন অনেকে।

খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে— ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় এবং প্রকাশ্যে স্থানে কোনও ধরনের সভা-জমায়েত বা উৎসব করা যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনও ধরনের অনুষ্ঠান, সমাবেশ, নাচ, গান ও কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। কোথাও কোনও ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।

গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করার কথাও বলা হয়।