যে দোষ করিনি সে দোষে শাস্তি পেলাম: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

যে দোষ আমরা করিনি, সেই দোষের ওপরে আমরা শাস্তি পেলাম। এটা আমাদের কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল। আমরা সেটা গ্রহণ করলাম বলে মন্তব্য করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেন। রায় শেষে আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকে ইংরেজি বছরের প্রথম দিন। সারা দুনিয়া এটি পালন করে বছরের নতুন দিন হিসেবে। আমরা আজকে আদালতে এসেছিলাম রায় শোনার জন্য। এসে মনটা ভরে গেলো। আমার বহু বন্ধুবান্ধব এখানে পেয়ে গেলাম। যাদের সঙ্গে আমার বহু দিন দেখা হয়নি। এরা আজকে এসেছে, এই আনন্দের দিনে যে আমার কী রায় হয়, আমার কী অবস্থা দাঁড়ালো—তা দেখার জন্য। আমি কিন্তু খুব খুশি তাদের দেখে। মনটা ভরে গেলো।’

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ। লেবার কোর্টের ইতিহাসে তড়িঘড়ি করে ড. ইউনূসের মামলার শুনানির জন্য ১০টি তারিখ দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আদালত চালিয়ে ইতিহাস ব্রেক করে আজকের এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। রাষ্ট্রপক্ষ কোনও কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। আপিল কোর্টে আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইবো।’

অপরদিকে কলকারখানা পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘রায় আইনানুগ হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে আসামিপক্ষ এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যেখানে তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই আদালতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে।’

রায়ের শুরুতেই মামলা চলাকালীন সাক্ষীর জালিয়াতি নিয়ে ড. ইউনূসের করা দুটি আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

এদিন বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হন ড. ইউনুস। রায় শুনতে আদালতে উপস্থিত হন রাজনীতি-বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, তার স্ত্রী অ্যাকটিভিস্ট রেহনুমা আহমেদ। এছাড়াও বহুল আলোচিত এই মামলার রায় পর্যবেক্ষণে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর ২টা ১২ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এরপর ২টা ১৩ মিনিটে ইউনূসের উপস্থিতিতে আদালত ৮৪ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন। ৩টা ৮ মিনিটে রায় পড়া শেষ হয়। রায় ঘোষণার পর ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন আপিলের শর্তে আসামিদের জামিনের আবেদন করেন। বিচারক ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় ৩০ দিনের মধ্যে আপিলের শর্তে সবার জামিন মঞ্জুর করেন।

এদিন রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় আদালত প্রাঙ্গণে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

আরও পড়ুন:

ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

যে কারণে জেলে যেতে হচ্ছে না ড. ইউনূসকে