নারীকে ব্ল্যাকমেইলিং: পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় কর্মরত ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শীতল পালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ‘পুলিশের ওসির ব্ল্যাকমেইলে গৃহবধূর সর্বনাশ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ আমলে নিয়ে বুধবার (৩ জানুয়ারি) সুয়োমোটো আদেশ দেয় রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি।

আদেশে বলা হয়, ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ঘটনায় রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ইন্সপেক্টর শীতল পাল। পুলিশের কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে এ ধরণের অপরাধমূলক ও নীতি বিরুদ্ধ কাজে যুক্ত হন, তা কমিশনের নিকট বোধগম্য নয়। শীতল পালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা হওয়া উচিত বলে কমিশন মনে করে। তাই শীতল পালের ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে আদেশ দেওয়া হয়। আদেশের অনুলিপি আইজিপিকেও পাঠানো হয়। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

সুয়োমোটো আদেশে বলা হয়, সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, পুলিশের একজন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শীতল পাল আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে একজন গৃহবধূর সঙ্গে দিনের পর দিন অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করেছেন। শারীরিক সম্পর্কের সময় তিনি আপত্তিকর দৃশ্য গোপনে মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখতেন। পরে এসব দেখিয়ে পুনরায় অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর পাশে টঙ্গী এলাকার একটি বাসায়। ইন্সপেক্টর শীতল পালের বাড়ি বাগেরহাট জেলায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামীর সঙ্গে ইন্সপেক্টর শীতল পালের বন্ধুত্ব ছিল। তাদের গ্রামের বাড়িও একই স্থানে। সে সুবাদে শীতল পাল ঢাকায় এলে গৃহবধূর স্বামীর অবর্তমানে তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। মোবাইল ফোনে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখতেন কখন তার স্বামী বাসা থেকে বের হয়ে যান। গৃহবধূর স্বামী যখন অফিসে, ঠিক তখনই তার বাসায় চলে যেতেন ইন্সপেক্টর শীতল পাল। নির্যাতিতার স্বামী বলেছেন, ‘প্রথমবার একা বাসায় নির্যাতিতাকে কুপ্রস্তাব দেন শীতল পাল। এতে রাজি না হওয়ায় শীতল পাল বলেন, আমি ট্রাকের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করবো। চিরকুট লিখে যাবো যে এর জন্য দায়ী তুমি।' এভাবে ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতাকে দুর্বল করেছেন শীতল পাল। এছাড়াও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবিও তুলে রাখতেন। স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে বারবার তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন শীতল পাল।’ এমনকি অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি নিজের মোবাইল ফোনে রাখতেন। যখন প্রয়োজন, তখন গৃহবধূর মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে ব্ল‍্যাকমেইল করেন ওই ইন্সপেক্টর। এমনকি মোবাইল হ্যাক করে আবার সেই ছবি মুছেও ফেলেন। যাতে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না যায়। মোবাইল ফোন হ্যাকড হওয়ার বিষয়ে ৪ ডিসেম্বর টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামী। এছাড়াও গত ৭ ডিসেম্বর নির্যাতনের বিষয়টি আইজিপি কমপ্লেইন সেলে লিখিতভাবে জানানো হয়।