তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন যুগোপযোগী করতে ছয় সুপারিশ

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ জানিয়েছে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি)  জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত  '২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার অষ্টম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন উপস্থিত অতিথিরা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস-এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে এই মৃত্যুর মিছিল কমাতে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। কারণ বিদ্যমান আইনে কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে।

এসময় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি সুপারিশ জানানো হয়। সেগুলো হলো—  আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে 'ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনও ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; এবং ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

বক্তারা বলেন, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি দক্ষিণ এশীয় স্পিকার্স সামিটের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে তামাকের ব্যবহার নির্মূল করার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে এই লক্ষ্য অর্জনে তিনটি পদক্ষেপের কথা জানান। সেগুলো হলো—স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা; তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণ করা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের জন্য সব ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।