বইমেলার নান্দনিক স্টল যেন ছবি তোলার হাট

অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসে। সাহিত্যানুরাগীরা প্রিয় লেখকের বই কিনতে এলেও, বেশির ভাগই মেলায় আসে ঘুরতে। আর মেলার নানা স্মৃতি ধরে রাখতে বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।

বইমেলার পঞ্চম দিন সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় বেশ কিছু স্টল-প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ করে। বাংলা একাডেমি চত্বরের মেলা প্রাঙ্গণে স্টল রয়েছে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর।

এর মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের স্টল বানানো হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদের আদলে, শিল্পকলা একাডেমি শীতল পাটি দিয়ে এবং চিনা দূতাবাসের স্টল-চায়নিজ বুক সাজানো হয়েছে চায়নিজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে।

মুন্সিগঞ্জের ঐতিহাসিক টিনের ঘরের আদলে স্টল

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে রিকশাচিত্র দিয়ে, আকাশ প্রকাশ সাজানো হয়েছে মুন্সিগঞ্জের ঐতিহাসিক টিনের ঘরের আদলে। এ ছাড়া ঘাসফড়িং, ময়ূরপঙ্খি ও অয়ন প্রকাশসহ বেশ কিছু স্টলের রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া।

আর এসব স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই হাতে নিয়ে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত দর্শনার্থীদের বড় একটি অংশ। এসব স্টল যেন পরিণত হয়েছে ছবি তোলার হাট।

অনেকে শুধু ছবি তুলতে আসেন বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। তবে যারা ছবি তুলতে আসছেন, তারাও পছন্দ হলে বই কিনছেন।

চায়নিজ দূতাবাসের স্টলের বিক্রয়কর্মী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের সব বই চীন থেকে প্রকাশিত। এগুলো বিভিন্ন প্রকাশনী আনে। প্রতিবছরই মেলা উপলক্ষে দূতাবাস বইগুলো সংগ্রহ করে মেলায় প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এখানে বই কেনার চেয়ে ছবি তুলতেই বেশি আসেন।

অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে রিকশাচিত্র দিয়ে

আকাশ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রেদোয়ান রাহাত বলেন, আমাদের স্টলটা একটু নান্দনিক হওয়ায় বেশির ভাগই আসেন ছবি তুলতে। যত লোকসমাগম হয়, তার তুলনায় বিক্রি কম। তবে খারাপও না। যারা ছবি তুলতে আসছেন, তারাও পছন্দ হলে বই কিনছেন। আমাদের প্রত্যাশা এবার সুন্দর একটি মেলা হবে সব মিলিয়ে।

অন্য প্রকাশের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন নাদিয়া আহসান। তিনি বলেন, মেলায় এবারই প্রথম তিন বান্ধবী ঘুরতে এলাম। প্যাভিলিয়ন দেখে চোখ আটকে গেল। তাই ছবি ও সেলফি তুলে রাখলাম সুন্দর এই আইডিয়ার জন্য।

আকাশ প্যাভিলিয়নের সামনে সহধর্মিণীর ছবি তুলে দিচ্ছেন আজাদ হায়দার। তিনি জানান, অফিস থেকে আজ আগেই ছুটি নিয়ে বের হয়েছি সহধর্মিণীর আবদার রাখতে। মেলায় এলাম প্রথমত ঘুরতে। আর যদি বই পছন্দ হয়, তাহলে কিনবো।

নতুন বই
পঞ্চম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৭০টি। এর মধ্যে গল্প ৮টি, উপন্যাস ৬টি, প্রবন্ধ ১টি, কবিতা ৩৬টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ১টি, শিশুসাহিত্য ১টি, শিশুসাহিত্য ৩, মুক্তিযুদ্ধ ২টি, ভ্রমণ ১, ইতিহাস ২টি, বঙ্গবন্ধু ১ ও অন্যান্য ৫টি।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের স্টল

মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদ রহমান। আলোচনায় অংশ নেন ইসরাইল খান ও তপন বাগচী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাইফুল আলম।

প্রাবন্ধিক মাসুদ রহমান বলেন, মানোত্তীর্ণ সাহিত্য সৃষ্টির সমূহ প্রতিভা ছিল মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরীর। মাত্র ৬০ বছরের জীবনে তার যে সাধনা ও কীর্তি, তা তাকে বাঙালির নবজাগরণের ইতিহাসে স্মরণীয়র আসন দিয়েছে। একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক-সম্পাদক, সংগঠক ও রাজনীতিক হিসেবে তিনি বরেণ্য। তার জীবনবৃত্তের পুরো তথ্য চয়ন ও বিশ্লেষণ করলে শুধু মুসলিম সম্প্রদায় বা পূর্ব বাংলার নয়, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে তাকে একজন যথার্থ রেনেসাঁ-অনুধ্যায়ী পুরুষ ও প্রকৃত বুদ্ধিজীবী হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে সাইফুল আলম বলেন, মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী একাধারে একজন লেখক, সংগঠক, রাজনীতিবিদ ও সম্পাদক ছিলেন। তিনি নিজে যেমন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তেমনি লেখক-সাহিত্যিকদের একত্র করেছেন, সংঘবদ্ধ করেছেন। তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে অবগত করার দায়িত্ব আমাদের যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

লেখক বলছি
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি নাসির আহমেদ, কবি ইসলাম রফিক, শিশুসাহিত্যিক চন্দনকৃষ্ণ পাল এবং লোকসাহিত্য গবেষক সৈয়দা আঁখি হক।

যারা ছবি তুলতে আসছেন, তারাও পছন্দ হলে বই কিনছেন

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, সরকার মাসুদ ও মাসুদ পথিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, সাফিয়া খন্দকার রেখা ও শামস্ মিঠু। দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করেন ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন 'প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন'-এর শিল্পীরা।

এ ছাড়া ছিল কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'নৃত্যালোক' এবং জুয়েল কুমার সরকারের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'নৃত্য নিকেতন'-এর নৃত্য পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ইয়াসমীন মুশতারী, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, লীনা তাপসী খান এবং সায়ন্ত মিশকাত জামি।

মঙ্গলবারের সময়সূচি
বইমেলার ষষ্ঠ দিন মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারিত) মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জফির সেতু। আলোচনায় অংশ নেবেন শাহিদা খাতুন ও সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আবদুল খালেক।