স্বাধীন কিছু করতে গিয়েই আমার মা-বাবা হত্যার শিকার: মেঘ

১২ বছর আগে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। তাদের একমাত্র সন্তান মাহি সরওয়ার মেঘ রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে মামাকে সঙ্গে নিয়ে কবর জিয়ারত করেন।

কবর জিয়ারত শেষে মাহি সরওয়ার মেঘ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন দেশে বাস করি। সবার স্বাভাবিক স্বাধীনতা পাওয়া উচিত। স্বাধীন কিছু করতে গিয়েই আমার বাবা-মা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।’

সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তখন মেঘের বয়স ছিল সাড়ে পাঁচ বছর। তখন কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই মা-বাবাকে হারানো মেঘ আজ ১৭ বছর বয়সী। এই কিশোরের চোখেমুখে শুধু মা-বাবার প্রতিচ্ছবি ভাসে।

বাবা-মায়ের আদর্শ ধারণ করা মেঘ বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ লেভেলে পড়ছেন। মেঘও পিছিয়ে নেই কোনও অংশে। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দল দুর্দান্ত ঢাকার জার্সির নকশা করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে মেঘ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার বাবা-মায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমি সবার কাছে পরিচিত। সবাই আমাকে অনেক আদর-স্নেহও করেন। তবে আমি বাড়তি কোনও সুবিধা নিয়ে বড় হতে চাই না। নিজে কিছু করে নিজের পরিচয়ে বড় হতে চাই। আমার মা-বাবার আদর্শকে ধারণ করেই আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’

মেঘ আরও বলেন, ‘আমার মা-বাবাকে নিয়ে সবাইকে বলতে শুনেছি তারা অনেক ভালো ছিলেন, ভালো কাজ করতেন। আমরা একটি স্বাধীন দেশে বাস করি। সবার স্বাভাবিক স্বাধীনতা পাওয়া উচিত। আমার মা-বাবা হয়তো স্বাধীন কিছু করতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কেউ তো এ কাজটা করেছে।’

কারও সুবিধা না নিয়ে নিজের পরিচয়ে বড় হতে চান মেঘ ছবি: প্রতিবেদক

এ সময় মেঘের মামা নওশের বলেন, ‘১২ বছর ধরেই আমরা বিচার চাচ্ছি। ঘটনা তদন্তে করতে গিয়ে যে নাটক হচ্ছে অথবা সরকারের দায়িত্বরত উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল জায়গা থেকে যে ধরনের মন্তব্য পাওয়া যায়, এসব শুনলে হতাশাই বাড়ে। কাদের কাছে বিচার চাচ্ছি! তারপরও আমরা এ দেশে থাকি। বিচার পাওয়ার অধিকার আমাদেরও আছে। যত দিন আমরা বেঁচে আছি, তত দিন আমার বোনের হত্যার বিচার, মেঘের মা-বাবার হত্যার বিচার আমরা চেয়ে যাবো।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। এ ঘটনায় মামলা করার পর এক যুগ কেটে গেলেও, এখনও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন। কবে নাগাদ মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে, তাও বলতে পারছেন না তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১০৫ বারের মতো সময় নিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। মামলাটি থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের হাত ঘুরে বর্তমানে আছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে।

তবে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে কোনও মামলার তদন্ত শেষ করার বিধান থাকলেও তা বাধ্যতামূলক নয়, এই সুযোগটাই তদন্ত সংস্থাগুলো নিচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিনও তদন্ত সংস্থা র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এ জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

আরও পড়ুন:

একযুগ শেষ, আর কত সময় লাগবে সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদনে?

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়: সংসদে আইনমন্ত্রী

১০৫ বারের মতো পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন