বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না, ধারণা কোরিয়ান রাষ্ট্রদূতের

বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক বলেছেন, শ্রীলঙ্কার মতো ঋণগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশের খুবই কম। শ্রীলঙ্কা যে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছিল, বাংলাদেশের সে ধরনের পড়ার আশঙ্কা খুব কম। তিনি বলেন, ‘‘এ অঞ্চলে কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ আছে বলে আমি মনে করি। মালদ্বীপে ‘ইন্ডিয়া আউট’ সাফল্য লাভ করেছে। যার কারণে ভারতীয় সেনা মালদ্বীপ থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। চীনের কারণে মালদ্বীপেরও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।’’

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  

এ সময় রাষ্ট্রদূত প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতা, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, আর যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি— এ ক্ষেত্রে  ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, এটা সবার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়? আমাদের ইসরায়েল নিয়ে কথা বলতে হবে। বিশেষ করে হামাসের সমালোচনা করতে হবে। অনেক নিরাপরাধ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী হামাস। এমনকি গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের শুরুটা হামাসই করেছে। বাংলাদেশ কেন হামাসের সমালোচনা করছে না?’

রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক এ সময় বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পে কোরিয়ার কাজ করার আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক সফলতার সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যাচ্ছে। কোরিয়া বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও অংশীদার হতে চায়, যেমনটা আমরা তৈরি পোশাক খাতে করেছি। কোরিয়ার কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে কখনও কোনও প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করে না। কিংবা খরচ বাড়িয়ে দেয় না। সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে।’  

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়ার তৈরি পোশাক খাতের সম্পর্ক অনেক পুরনো। ১৯৭৯ সালে কোরিয়ার দাইয়ু এবং বাংলাদেশের দেশ গার্মেন্টস সম্পর্কের বীজ এখানে স্থাপন করে। তখন থেকেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং রফতানির ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। তবে বাংলাদেশকে সনাতন পোশাক তৈরির পাশাপাশি আরও নতুনত্ব আনতে হবে। সিনথেটিক পণ্যের দিকে বেশি জোর দিতে হবে। তার জন্য অনেক বিনিয়োগ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন আছে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২২ সালে ৩ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা এযাবৎ কালের রেকর্ড। কিন্তু গত বছর তা কিছুটা কমে যায়। বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ পঞ্চম স্থানে। সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ খাত হচ্ছে— অটোমোবাইল, মোবাইল ফোন এবং ইলেক্ট্রনিক্স। এগুলো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে প্রস্তুত করা হয়। তাতেও ভিসা, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, ট্যারিফ পলিসি এবং লভ্যাংশ দেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থেকে গেছে।’     

কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কোরিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। ইপিএ প্রোগ্রামের আওতায় ২০০৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৬৯৭ জন অভিবাসী কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন। এই কর্মীরা কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কোরিয়া থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের অনেক সফলতার গল্প আছে। তারা তাদের অর্থ, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা এখানে কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজে লাগাচ্ছেন। কোরিয়ার সরকার বাংলদেশে ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার তৈরিতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুত।’