স্মার্ট রাস্তা হলো, এবার দরকার স্মার্ট নাগরিক

এ বছরের শুরুতেই রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ যায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবকের। ভোর পৌনে ৪টার দিকে সড়কের মাস্তুল এলাকায়  ঘটে এ দুর্ঘটনা। খিলক্ষেত থানার এসআই মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ভোর রাতে মোটরসাইকেলে করে তারা পূর্বাচল থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। মাস্তুল এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ঠিক আগের মাসে রাজধানীর কুড়িল-পূর্বাচল সড়কের একই এলাকায় ট্রাফিক গুলশান বিভাগ ও গুলশান ক্রাইম বিভাগ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।

মুন্সিগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে এ বছরের জানুয়ারিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বঙ্গবন্ধু টোল প্লাজার সামনে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি।

ঢাকাকে যানজটমুক্ত করে তুলতে নানাবিধ উদ্যোগের অন্যতম হলো ঢাকা উত্তরের কুড়িলের ৩০০ ফিট, দক্ষিণের মাওয়া হাইওয়ে।

তিনশ ফিটের রাস্তা মানুষের চলাচল সহজ করেছে ছবি: নাসিরুল ইসলাম

সরেজমিনে তিনশ ফিটের রাস্তায় দেখা গেছে, যেখানে সেখানে টিকটক ভিডিও করার জন্য মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। অন্তত তিনটি জায়গা থেকে উল্টোপথে ইজিবাইকগুলো ঢুকে পড়ে। যদিও এদের এখানে চলাচল করার কথা নয়। যখন টানা রাস্তায় কোনও প্রাইভেটকার বা ভারী যানবাহন চলাচল করে সেখানে ছোট বাহনগুলো যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে না চললে দুর্ঘটনা ঠেকানো যায় না। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভিডিও বানানোর জন্য যারা সেখানে যান, তারা মোটরবাইক নিয়ে নানা স্টান্ট দেখানোর ভিডিও করতে গিয়ে খেয়ালও করেন না তার আশেপাশে কী আছে আর নেই। এমনকি বিভিন্ন জায়গার রেলিংগুলোর ওপরে উঠে ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিকটক করতেও দেখা গেছে। এসব সড়কে যানবাহনের গতি মাপার ব্যবস্থা থাকলেও সেসব মনিটরিং নিয়ে আছে নানা অভিযোগ।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, যখন নগর স্মার্ট করবেন তখন সেই নগরে বসবাসকারীদের সেটার সঙ্গে অভ্যস্ত করে তুলতে হয়। সেজন্য মনিটরিং ছাড়াও বেশকিছু সচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকতে হবে। যদিও যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, গাড়িচালকদের লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ হয় তাহলে অনেক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভিডিও বানানোর জন্য যারা সেখানে যান ছবি: নাসিরুল ইসলাম

সম্প্রতি ট্রাফিক গুলশান বিভাগ ও গুলশান ক্রাইম বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ৩০০ ফিট এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ওভারস্পিড, উল্টো পথে চলাসহ অন্যান্য ট্রাফিক আইনভঙ্গের জন্য নেওয়া হয় আইনানুগ ব্যবস্থা। প্রতিদিন অভিযান চালানোরও ঘোষণাও করা হয়।

ডিএমপির গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন, অভিযান এখনও নিয়মিত চলছে। ট্রাফিক গুলশান বিভাগ ও গুলশান ক্রাইম বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এ অভিযান চলে। যেখানে সেখানে পার্কিং, টিকটকারদের ভিড়, উল্টোপথে যাতায়াত— এসব যেন কেউ না করে সেই তদারকি করা হয় নিয়মিত। কিন্তু আমাদের নাগরিকদেরও স্মার্ট হওয়ার সময় এসেছে, বড় বড় বহুমুখী রাস্তা কেবল তাদের জন্যই, সেখানে অসচেতনতাবশত অবহেলা করে প্রাণ দেওয়াটা মোটেই স্মার্টনেস নয়।

বেশি দুর্ঘটনার কারণ ছোট যানবাহনগুলোর উল্টোপথে চলাচল ছবি: নাসিরুল ইসলাম

স্মার্ট নগরীর অন্যতম উপাদান স্মার্ট নাগরিক উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আখতার মাহমুদ বলেন, ছোটবেলা থেকে শিশুকে শেখাতে হবে রাস্তায় কীভাবে চলতে হয়, নিয়মগুলো কী, তার দায়িত্ব কী। তাকে তার দায়িত্ব বিষয়ে সংবেদনশীল হতে হবে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ দরকার কিন্তু সেটা দিয়ে সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। স্মার্ট নাগরিক লাগবে। তা না হলে, আপনি তাকে টেকনোলজি দেবেন, সে অপব্যবহার করবে, বড় রাস্তা দেবেন সে সেটার অপব্যবহার করে নিজের ক্ষতি ডেকে আনবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন দুর্ঘটনা কমাতে আইনের শাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবশ্যই চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে হবে। এবং রাস্তায় চলাচলের নিয়ম ছোটবেলা থেকেই শেখানোর পাশাপাশি নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম চালানোয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে।