শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুল নিয়ে যা বলছেন ব্যবসায়ীরা

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর। দিনটি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এদিন বাঙালিরা রক্ত ঝরিয়েছে। দিনটিকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও বলা হয়। দিবসটি স্মরণ করতে ফুলের ডালা দিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলির ডালা তৈরিতে শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীরা শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর প্রধান ফুলের বাজার শাহবাগ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

image_6487327(8)বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি পিস দেশি গোলাপ ৫০-৬০ টাকা, বিদেশ থেকে আমদানি করা গোলাপ ১০০-১২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ১৫-২০ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ৩০-৪০ টাকা, জারবেরা ৪০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ৩০-৪০ টাকা, লিলি ৫০০ টাকা, ক্যালেন্ডোলা ২০ টাকা, চায়না মাম ১৫০ টাকা, সবুজ মাম ১২০ টাকা, জিপসি (আঁটি) ৫০-৬০ টাকা, গাঁদা (মালা) ১০০-২০০ টাকা, কামিনী পাতা (আঁটি) ১০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

image_6487327(6)২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুল ও ফুলের ডালা বিক্রির ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন শাহবাগের ফুল বিক্রেতারা। কিন্তু এবছর ফুলের দাম বাড়ায় কিছুটা শঙ্কাও আছে বিক্রেতাদের। তারপরও বিশেষ এই দিবস ঘিরে ভালো বিক্রির আশায় আছে তারা।

জারবেরা পুষ্প বিতানের বিক্রেতা মো. শহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুধু গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকা ফুল দিয়ে একেকটা ডালা ১২০০ টাকায় বিক্রি করি। কিন্তু গত বছর একই ফুল দিয়ে এরকম ডালা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতাম। আর চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, গ্ল্যাডিওলাস দিয়ে একটা ডালা ১৬০০ টাকায় বিক্রি করি। আগে এগুলো বিক্রি করতাম ৮০০-১০০০ টাকায়। কিন্তু আজকে সকাল থেকে মাত্র দুইটা ডালা বিক্রি করতে পেরেছি। ফুলের দাম বেশি থাকাতে মানুষ বেশি কিনছে না।

image_6487327(5)ইকো ফ্লাওয়ার শপের বিক্রেতা নাজমুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজকে সকাল থেকে ২০টি ডালা বিক্রি করেছি, ৩০টি বানিয়ে রেখেছিলাম। লাগলে আরও বানাবো। আমার বিক্রি ভালোই হচ্ছে। আশা করি লাভ উঠে আসবে।

image_6487327(4)নাইম পুষ্প বিতানের বিক্রেতা মো. সাইফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের বিক্রি ভালোই হচ্ছে। সকাল থেকে ৬টা গোলাপের ডালা বিক্রি করেছি। প্রতিটি ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে। আজকের দিনে লাল গোলাপের ডালার দাম একটু বেশি। অন্য রঙের গোলাপের ডালার দাম কিছুটা কম হবে। রাতের মধ্যে আরও বিক্রি হবে বলে মনে হচ্ছে। 

image_6487327(3)বিসমিল্লাহ ফ্লাওয়ার শপের বিক্রেতা মো. ফারুক হুসাইন বলেন, সকাল থেকেই টুকটাক বিক্রি চলছে। রাতে বিক্রি আরও বাড়বে। আগামীকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত মোটামুটি বিক্রি হবে। আশা করা যায় বিক্রি ভালো হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম আহমেদ এসেছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের ডালা কিনতে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি গতকাল একটা ডালা অর্ডার করেছিলাম ১৬০০ টাকা দিয়ে। এখানে গাঁদা আর চন্দ্রমল্লিকা ব্যবহার করা হয়েছে। দাম আমার হিসেবে বেশি নিচ্ছে। এতো দাম হবার কথা না। কিন্তু তারা বলছেন, এবার ফুলের দাম বেশি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

image_6487327(2)একটি স্কুলের জন্য ১০টি ডালা কিনতে এসেছিলেন মো. রবিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি দুইদিন আগে অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। তাই ৮০০ টাকা করে কিনতে পেরেছি। একই ধরনের ডালা আজকে তারা বিক্রি করছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এবার ফুলের ডালার দাম সত্যিই বেশি। গত বছর আমি ১৮টি ডালা কিনেছিলাম, সেগুলো ৬০০ টাকা করে ছিল।

image_6487327(1)শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত বিক্রি তেমন নেই বললেই চলে। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে যেরকম বিক্রি থাকার কথা ছিল, সেটা নেই। সকাল থেকে এখন (রাত ৮টা) পর্যন্ত মাত্র ১০টা ডালা বিক্রি করতে পেরেছি। অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছি ২০০টি ডালার। মানুষ দাম শুনেই চলে যায়। একটা নরমাল ডালার পিছনে আমাদের খরচ আছে সাড়ে ৭৫০-৮৫০ টাকা। আমরা দাম চাইছি এক হাজার টাকা করে। অথচ মানুষ এসে দাম বলছে ৪০০-৫০০ টাকা। এভাবে কীভাবে ব্যবসা করবো?

image_6487327তিনি আরও বলেন, যারা খুচরা ব্যবসায়ী তারা আসলে ব্যবসা করতে পারছে না। সবারই বিক্রি কম। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিক্রি ভালো করেছে। আমরা এবার তেমন অর্ডার পাইনি, তাই খুচরাভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর সত্যি বলতে দশ-বিশটা বা খুচরা বিক্রি করে লাভ করা যায় না।

ছবি: প্রতিবেদক