প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ, সঙ্গে ফটোগ্রাফ

বই হলো মানুষের জাগতিক, মনোস্তাত্মিক, নৈতিক, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক উচ্চমার্গে উপনীত হওয়ার প্রধান সোপান। আত্মার সঙ্গে আত্মার যেমন সম্পর্ক, তেমনি বইয়ের সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক। আর এই সম্পর্কের গভীরতা তৈরির শ্রেষ্ঠ মাধ্যম অমর একুশে বইমেলা। মাসব্যাপী এই আয়োজন পাঠক, লেখক ও প্রকাশক সবার এক মহামিলন মেলা। আধুনিকতার এই যুগে নানা উপায়ে ঘরে বসেই সংগ্রহ করা যায় যেকোনও নতুন বই। তবুও মেলায় এসে বই কেনার যে আনন্দ, তা কেবল বইপ্রেমীরাই জানেন।

বইপ্রেমীদের কাছ থেকে জানা যায়, বইমেলায় আসার সবচেয়ে বড় কারণ খানিকটা হলেও প্রিয় লেখকদের সান্নিধ্য পাওয়া। বইমেলায় প্রিয় লেখকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়াটাই যেন বইপ্রেমীদের বইমেলায় আসার অন্যতম কারণ। শিশু-তরুণ এমনকি অনেক বৃদ্ধকেও দেখা যায় প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকতে। অটোগ্রাফের সঙ্গে অনেককে আবার ফটোগ্রাফেও ব্যস্ত দেখা যায়। কেউ বন্ধু বা স্বজনের হাতে ক্যামেরা দিয়ে ফ্রেমবন্দি হচ্ছেন, আবার কেউ একেবারে নিজেই তুলে নিচ্ছিলেন প্রিয় লেখকের ছবি।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকজন পাঠকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলছেন, প্রিয় লেখকদের অটোগ্রাফ তাদের মাঝে অন্য রকম আনন্দ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ পাওয়াই মূলত তাদের বইমেলায় আসার স্বার্থকতা।

এদিন বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, বইমেলার প্যাভিলিয়ন-স্টলগুলোর সামনে তরুণ-তরুণীরা দলে দলে রঙ-বেরঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কেউ দাঁড়িয়ে বই দেখছেন, আবার অনেকেই প্রিয় লেখকদের সঙ্গে দূর হতে বা কাছে থেকে লেখককে নিজের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দী করছেন। 

পাঠকদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক (ছবি: প্রতিবেদক)

জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের অটোগ্রাফ পেয়ে উচ্ছ্বসিত রাজধানীর সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শাফিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার প্রিয় লেখক জাফর ইকবাল স্যার। ওনার বই আমার খুব ভালো লাগে। আমি তপু, দিপু নাম্বার টু, বিজ্ঞানের ১০০ মজার খেলা, অন্ধকারের গ্রহ, ক্রেনিয়াল, ভূতের বাচ্চা সোলাইমান, প্রলয় সহ ওনার লেখা অসংখ্য বই পড়েছি। মেলায় এসে ওনার সাক্ষাৎ পাওয়াটা আমার জন্য বেশ আনন্দের। নতুন বইয়ে স্যারের অটোগ্রাফ পাওয়া সাথে ছবি তুলতে পারা আরো বেশি আনন্দের।

পুরান ঢাকা থেকে প্রিয় লেখক আনিসুল হকের অটোগ্রাফসহ বই কিনতে বইমেলায় এসেছিলেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে স্নাতকে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাহতাব হোসেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, বইমেলায় এসে যখন প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ সম্বলিত বই কিনতে পারি সেটাই আমার কাছে মেলায় আসার স্বার্থকতা মনে হয়। কারণ এখন তো অনলাইনের যুগ। ঘরে বসেই অর্ডার করলেই বই হাতে চলে আসবে। কিন্তু বইমেলায় এসে সরাসরি লেখকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়া এ এক অন্যরকম অনুভূতি। আমি আনিসুল হক স্যারের অসংখ্য বই পড়েছি। এবার ওনার মাকে নিয়ে লেখা উপন্যাস 'কখনো আমার মাকে' বইটি কিনতে এসেছি। 

প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ পাওয়ার অপেক্ষায় দেখা যায় আরও অসংখ্য পাঠক ও বই প্রেমীদের। তাদের মধ্যে একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাফা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, টিউশনি, অ্যাসাইনমেন্ট ও একাডেমিক পড়াশোনা এসবের চাপে সবসময় মেলায় আসার সুযোগ হয়ে ওঠে না। আর এসবের চাপে অন্য সব বই পড়াও তেমন একটা হয় না। তবে কিছু কিছু উপন্যাস আছে যা পড়লে মন ভালো হয়ে যায়, ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আর সেরকম উপন্যাস সবাই লিখতেও পারে না। এবারের মেলায় আমি আমার প্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের অটোগ্রাফসহ তার 'আগুন ডানা মেয়ে' এবং 'তোমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে' এই দুটি উপন্যাস কিনেছি। সাথে তার সঙ্গে ছবিও তুলেছি। আমি তার লেখার একজন ভক্ত।

অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত আরেক জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল (ছবি: প্রতিবেদক)

প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ এবং ফটোগ্রাফ বই পড়ার ক্ষেত্রে কিরূপ উৎসাহ বা উদ্দীপনার সৃষ্টি করে এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যখন বই পড়ি আর সেই বইয়ের মধ্যে যখন সেই লেখকেরই অটোগ্রাফ থাকে তখন মনে হয়, লেখক বোধহয় গল্পটা আমাকেই বলছেন। তখন বই পড়তে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।’

বই মেলার ৬১৬ নং স্টলের (কেন্দ্রবিন্দু) সামনে যেতেই দেখা যায় পাঠকদের ভিড়। পাঠকরা লতিফুল ইসলাম শিবলীর 'ইমাম' বইটি অটোগ্রাফসহ কেনার জন্য ভিড় করেছেন। 

ইসরাফিল আহমেদ নামে অপেক্ষমাণ একজন পাঠক বলেন, ‘আমি নাটোর থেকে এসেছি শিবলী স্যারের ফটোগ্রাফসহ বই কিনতে। বই কিনেছি, আবার স্যারের সঙ্গে ছবিও তুলেছি। আসলে সারা বছর কিন্তু এমন সুযোগ থাকে না। কেবল ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলায় এলেই এরকম সুযোগ আসে। বইমেলায় আসার সবচেয়ে বড় কারণ প্রিয় লেখকের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। আর নতুন নতুন বই দেখেশুনে কেনা যায়।’