রাজধানীতে কিশোরগ্যাংয়ের ২৭ সদস্য গ্রেফতার

রাজধানীতে ত্রাস সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাংয়ের লিডারসহ ৫টি গ্রুপের ২৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিমকার্ড এবং নগদ টাকাসহ বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে কিশোরগ্যাং রাব্বি গ্রুপের ৫ জন, হৃদয় গ্রুপের ৭ জন, মুন্না গ্রুপের  ৩ জন, হাসান গ্রুপের ২ জন এবং রকি গ্রুপের ১০ জনসহ মোট ২৭ জন।

র‍্যাব জানায়, কিশোরগ্যাংয়ের এই সদস্যরা পেশায় গাড়ির হেলপার, ড্রাইভার, গ্যারেজের মিস্ত্রি, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, ভাঙারি পণ্যের ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা।  তবে এসব পেশার আড়ালে তারা মাদক সেবন, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারিতে) বিকালে টিকাটুলি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, রাজধানীর শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর ও বংশাল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের এই সদস্যরা  দীর্ঘদিন ধরে এলাকার আধিপত্য বিস্তারের নামে মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, অস্ত্র প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল। তাদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩  গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর ও বংশাল এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তাদের প্রতিটি গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে। রাব্বি গ্রুপটি সন্ত্রাসী মো. রাব্বির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে আসছে। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে তারা ২ থেকে ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়। সন্ত্রাসী হৃদয়ের নেতৃত্বে আরেকটি গ্রুপ রাজধানীর বংশাল ও আশাপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। এ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে আসছিল। 

তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলিস্তান, বংশাল, চকবাজার এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারা মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,  শাহজাহানপুর ও সবুজবাগ এলাকায় সন্ত্রাসী মুন্না ও হাসানের নেতৃত্বে দুটি কিশোরগ্যাং গ্রুপ রয়েছে। তারা শাহাজাহানপুর, সবুজবাগ, খিলগাঁও এবং এর আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মারামারিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছিল। এ গ্রুপের সদস্যরা সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেলে বিকট শব্দ করে খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও জানান, এছাড়া রকি গ্রুপটি রাজধানীর শ্যামপুর কদমতলী, যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মানুষকে হুমকি ও মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের মূল টার্গেট ছিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা। তারা রকির নেতৃত্বে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো।

গ্রেফতারদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতির চেষ্টা, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, মারামারি, ছিনতাই,  চাঁদাবাজি, মাদক, দস্যুতা, অস্ত্র ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানায় র‍্যাব।