বইমেলায় কেমন হলো খাবারের ব্যবসা?

দুই দিন সময় বাড়িয়ে আজ শনিবার সাঙ্গ হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার। মেলায় পাঠক-দর্শনার্থী-বিক্রয়কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সুবিধার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পাশে খাবারের স্টলের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে মোট ২১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ফুচকা, আইসক্রিম ও কফি শপ। বইমেলায় বিশেষ করে কাচ্চি-বিরিয়ানির দোকান নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। কেউ কেউ বলেছেন, মাত্র কয়েকঘণ্টার এই মেলায় কাচ্চি-বিরিয়ানির মতো ভারী খাবারের স্টল দিয়ে এর পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে। মেলা শেষে এই খাবার ব্যবসায়ীরা কেমন ব্যবসা করলেন—  খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় এই ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ একাধিক স্টলেরও মালিক। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, মাসব্যাপী মেলায় স্টলগুলোতে দৈনিক গড়ে বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। তবে এই বিক্রি সন্তোষজনক না বলে দাবি করেছেন তারা। লাভ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

শুক্রবার (১ মার্চ) খাবারের স্টলগুলোর কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, এবার তেমন একটা বিক্রি হয়নি। কারও বিক্রি ৩০-৪০ হাজার আবার কারও কারও ২৫-৩০ হাজার টাকা। মেলার শেষ শুক্রবার গতকাল বিক্রি সবচেয়ে কম ছিল বলেও জানান তারা।

শুক্রবার খাবারের দোকানগুলো বেশিরভাগই দেখা গেছে ফাঁকা (ছবি: প্রতিবেদক)

অন্যদিকে আইসক্রিম বিক্রেতারা জানান, মেলায় দোকান বেশি, সেই আলোকে বিক্রি ভালোই। জায়গাভেদে বিক্রির পার্থক্য রয়েছে বলেও জানান তারা। কারও দৈনিক বিক্রি ১০-১২ হাজার টাকা, কারও বিক্রি ৫-৬ হাজার টাকা।

অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর শেষ দুদিন শুক্রবার মেলায় ঘুরে দেখা যায়, বর্ধিত এই সময়ে ছুটির দিনেও সেই চেনা পরিচিত ভিড় নেই। খাবারের দোকানগুলোতেও লোকসমাগম কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাবারের দোকান মেলার একেবারে শেষ প্রান্তে বরাদ্দ দেওয়ায় ও সবগুলো দোকান একসঙ্গে দেওয়ায় বিক্রি কম হয়েছে। অনেকে ফুড কোর্টের বিষয়ে জানেন না বলেও মনে করেন তারা।

‘বিসমিল্লাহ ফাস্টফুড অ্যান্ড নান্না বিরিয়ানি’ ও ‘কাবাব ঘরের’ ম্যানেজার নাহিদ বলেন, দেখেন আজ শুক্রবারেও লোকজন নেই। বিক্রি তেমন একটা ভালো না। আজকে ১৫ হাজারও বিক্রি করতে পারিনি। পুরো মেলায় দৈনিক গড়ে ৪০-৪৫ হাজার করে বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এটি সব খরচপাতি বাদ দিয়ে লাভের সম্ভাবনা খুব কম।

পুরান ঢাকার ‘নিউ হাজী বিরিয়ানি’ ও ‘পিঠা ঘরের’ ম্যানেজার ইব্রাহিম বলেন, ‘দৈনিক গড় বিক্রি ৩০-৪০ হাজার করে বিক্রি হয়েছে। পুরো বিষয় বিবেচনায় বিক্রি তেমন একটা ভালো না। লাভের সম্ভাবনা খুবই কম, হয়তো অল্প কিছু থাকতে পারে।’

‘পুরান ঢাকার হাজী বিরিয়ানি’র স্টলের ম্যানেজার রহিমও বললেন একইরকম কথা। তিনি বলেন, ‘দৈনিক ২৫-৩০ হাজার গড়ে বিক্রি হচ্ছে দুটি স্টলে। সবার খরচাপাতি দিয়ে লোকসানই হবে মনে হচ্ছে। ফুড কোর্ট এমন জায়গায় দেওয়া হয়েছে, অনেকেই জানে না। দুটি ভাগে ভাগ করে দিলে ভালো হতো। টিএসসি পাশে ১০টা, আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পাশে ১০টা।’

বইমেলায় আইসক্রিমের দোকান (ছবি: প্রতিবেদক)

আইসক্রিম শাহ আলম বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ‘বিক্রিটা আসলে জায়গাভেদে পার্থক্য আছে। আমার গড় বিক্রি হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা, মোটামুটি ভালো।’

আরেক আইসক্রিম বিক্রেতা জিলানি বলেন, ‘যতগুলো দোকানপাট বসেছে, সে হিসেবে বিক্রি খারাপ না। আমার বিক্রি দৈনিক গড়ে ৫-৬ হাজার টাকা।’

নতুন বই

অমর একুশে বইমেলার ৩০তম দিন শুক্রবার (১ মার্চ) নতুন বই এসেছে ২১৯টি।

অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠান

বইমেলার ৩১তম দিন শনিবার (২ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার সমাপনী দিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

বইমেলায় খাবারের দোকান (ছবি: প্রতিবেদক)

বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন 'অমর একুশে বইমেলা ২০২৪'-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।