রাজধানীর বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে আগুন লাগার পর ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কাজ ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেবল ঘটনাস্থলেই নয়, আগুনের ঘটনায় হতাহতদের বহন করা অ্যাম্বুলেন্স যখন গভীর রাতে হাসপাতালে পৌঁছে, সেখানে জরুরি বিভাগে প্রবেশ করতে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের সুবিধার্থে জরুরি বিভাগের বাইরের গেটে থাকা অস্থায়ী দোকানগুলো পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তুলে দিয়েও ‘উৎসুক মানুষের’ ভিড়ে অ্যাম্বুলেন্সকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অনেকক্ষণ। এ সময় আনসার সদস্যরা হ্যান্ড মাইকে বারবার সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও জনতা তাতে গুরুত্ব দেয়নি।
সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘উৎসুক জনতা’। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তেমন তৎপর দেখা যায় না। দাঁড়িয়ে ভিডিও করা, সাহায্য করার আগ্রহ থেকে ভিড় জমানো— এ যেনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু মূল কাজটি যে ব্যাহত হচ্ছে, তা কারোর চিন্তাতে নেই।
সম্প্রতি বেইলি রোডের ঘটনায় দেখা যায়, আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনটির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন ভেতরে আটকে পড়াদের স্বজনরা। এসময় উৎসুক মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ে আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ের কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হওয়ায় এক পর্যায়ে ভবনটির সামনে থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের।
কেন সরছেন না প্রশ্নে একদল তরুণ বলেন, যদি আমরা কোনও কাজে আসি, সেজন্যই ছুটে এসেছি। আমাদের আশেপাশে সবাই কী হচ্ছে দেখতে এসেছে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ভিড় ঠেলে ঘটনাস্থলে কাজ করতে ফায়ার ফাইটারদের সমস্যা হয় মনে করেন কিনা, প্রশ্নে এক তরুণ বলেন, তারা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটাও দেখে রাখার বিষয় আছে। আর যারা এখানে আসেনি, তাদের ভিডিও’র মাধ্যমে বিষয়টা দেখানোর চেষ্টাও করছেন অনেকে, কেউ কাউকে বিরক্ত করছে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নগর-স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা কম না। তারা কোথায়। আবার হাসপাতালের ভিড়ের কথা যদি বলি— আহতরা কিছু না কিছু কথাতো বলতে পারে। হাসপাতালে কে আসলো, কোথায় তাদের রাখা হয়েছে, এসব যদি মাইকে ঘোষণা করা হয় কোন বুথ থেকে, তাহলেই অযথা ভিড় কমে। এধরনের ঘটনায় কেবল জনতাকে দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই।’
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেসপন্স টাইম যদি ফায়ার সার্ভিসের রেসপন্স টাইমের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়— তাহলে ভিড় সামলাতে সুবিধা হবে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম) দিনমনি শর্মা বলেন, ‘যেকোনও দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় যাওয়ার আগে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাই। তারা সেখানে পৌঁছানোর আগে ভিড় হয়ে যাওয়ায় আমাদের কাজ ব্যাহত হয়। এরকম প্রায়ই হয়ে থাকে। আমরা আগুন নেভানো, উদ্ধারের দায়িত্ব পালন করি। ভিড় সামলানোর দায়িত্ব আমাদের নয়।’
যে লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাদের কাজে লাগানো সম্ভব কিনা— প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারাতো নিজেদের উদ্যোগে আসে। তাদেরকে আনার ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে তারা ঘটনা জানার পরে নিজ উদ্যোগে আসতে সময় লাগে।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই ভবনে আগুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী এবং আট জন শিশু। নিহতদের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তাদের ৩৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মর্গে রয়েছে দুজনের লাশ। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বাকি ছয় জনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।