সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা

বাংলা ভাষা আন্দোলনে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতি স্মরণে ভাষার মাসে আয়োজন করা হয় অমর একুশে বইমেলার। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন উদ্বোধন ও শেষ দিন পর্দা নামে। কিন্তু এবারই প্রথম ৩১ দিনব্যাপী হয়। বইমেলার ইতিহাসে সময়ের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী এটি সবচেয়ে বড় মেলা।

শনিবার (২ মার্চ) সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অবদানের জন্য প্রকাশনী, প্রকাশক ও প্যাভিলিয়নকে পুরস্কৃত করা হয়।

এ দিন মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল থেকে পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন একটা না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর দর্শনার্থীদের জোয়ার নামে। শেষ দিন বিক্রিও সন্তোষজনক ছিল বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।

বিক্রয়কর্মীরা জানান, শেষ দিন লোকসমাগম প্রত্যাশা মতোই ছিল। বিক্রিও হয়েছে বেশ। এ দিন নাম বলেই বই কিনেছেন অধিকাংশ পাঠক।

গ্রন্থরাজ্যের বিক্রয়কর্মী লাবলু বলেন, ‘আজ আমাদের অনুবাদের বইগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে। আজকের বিশেষত্ব হলো যারাই এসেছেন, নাম বলেই বই কিনে নিয়েছেন। দেখে যাচাই-বাছাই করে বই কেনার পাঠক খুব কমই ছিল।’

নতুন বই

মেলার শেষ দিন নতুন বই এসেছে ৩৭৫১টি। এসব বইতে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ইতিহাস’সহ উঠে আসে আরও নানান বিষয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথিরা

সমাপনী অনুষ্ঠান

বিকাল ৫টায় বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের লিখিত প্রতিবেদন তার পক্ষে পাঠ করেন একাডেমির উপ-পরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বেগম নাহিদ ইজাহার খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। বক্তব্য রাখেন সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড-এর সিএমও মীর নওবত আলী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনা। তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিকাশের পরও মুদ্রিত বইয়ের আবেদন যে কোনোমতেই ফুরিয়ে যায়নি তার প্রমাণ একুশে বইমেলায় ক্রমবর্ধমান জনসমাগম।’

শেষ বিকালে মেলা প্রাঙ্গণে পাঠকের ভিড়

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪

সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান করা হয়। গত বছরের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘ধাত্রাতিহাস’, ‘বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪’ দেওয়া হয়। শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খীকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান করা হয়।

২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট) এবং বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪’ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন এবং উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।