‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইনি পরিকাঠামো তৈরির আহ্বান’

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইনি পরিকাঠামো তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। সোমবার (১১ মার্চ) আইন কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা, বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ.বি.এম. খায়রুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন আইন কমিশনের লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান (অতিরিক্ত জেলা জজ) আবেদা সুলতানা।

আইন কমিশনের সচিব (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) ড. আতোয়ার রহমানের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তিনি তার স্বাগত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করা অর্থই বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। ব্যক্তি স্বাধীনতা যার যার, বঙ্গবন্ধু সবার। তাই বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ সর্বযুগে মুজিবময় হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ড. মুনতাসীর মামুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর অশেষ অবদান, ত্যাগ, সংগ্রামী জীবন ও সম্মোহনী নেতৃত্বের বিষয়গুলোতে আলোকপাত করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম বিষয়ক তার রচিত গ্রন্থে প্রকৃত ইতিহাস ফুটিয়ে তোলার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন।

এসময় মুনতাসীর মামুন পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, দর্শন, নানা মতের মানুষকে সংগ্রামে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা, সংবিধানের মূলনীতি প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে তার রচিত গ্রন্থটি প্রকৃত ইতিহাসের আকর গ্রন্থ বলে প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে তার মতাদর্শ, স্বপ্ন ও চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধারণ করতে সকলকে তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সমুন্নত রাখতে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী ও ৭ম সংশোধনী মামলায় বিচারপতি খায়রুল হকের অপরিসীম অবদান ও নির্ভীক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ করেন।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি এ.বি.এম. খায়রুল হক সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বাঙালির জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা বিকাশে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে একটি অনন্য সাধারণ সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্ব প্রশংসার দাবি রাখে। ১৯৭২ সালের সংবিধান বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতির চূড়ান্ত প্রতিফলন। তাই সংবিধানকে হৃদয়ে ধারণ ও সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করতে পারলেই প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে আলোচক জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রেরণার উৎস। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগ, ভাষ্য আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় নেতৃত্বের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।

বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও চলচ্চিত্রকার শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম অবদানের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইনি পরিকাঠামো তৈরির আহ্বান জানান। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও কর্ম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সরকারি উদ্যোগে অফিসিয়াল ডকুমেন্টারি প্রস্তুতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. আবু বকর সিদ্দিকী তার বক্তব্যে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি আলোকপাত করে সকলকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করার আহ্বান জানান।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা তার বক্তব্যে বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও কর্মের কথা উল্লেখপূর্বক বলেন, বাংলা, বাংলাদেশ ও বাঙালি যতদিন থাকবে বঙ্গবন্ধুর অমরকীর্তি ততদিন বাঙালিকে আলোর পথ দেখাবে।

পরে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোরশেদ ইমতিয়াজের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।