৩১ বছর পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ডলার গ্রেফতার

১৯৯৩ সালে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে অস্ত্রের দ্বন্দ্বে যশোর জেলার অভয়নগর থানার কোটা গ্রামে চাঞ্চল্যকর মতিয়ার রহমান তরফদার হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আক্তারুজ্জামান ডলার (৫৫)-কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব ৩)।   

গত ৩১ বছর ধরে দেশ-বিদেশে পলাতক চরমপন্থী ডলারকে শুক্রবার (২২ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদী এলাকা থেকে গ্রেফতার গ্রেফতার করা হয়।

শনিবার (২৩ মার্চ) র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও মামলার বরাত দিয়ে তিনি  জানান,  ভিকটিম মতিয়ার রহমান তরফদার ও গ্রেফতারকৃত আসামি আক্তারুজ্জামান ওরফে ডলার একই গ্রামের দুই পাড়ার বাসিন্দা। ডলার ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (সর্বহারা পার্টি) সক্রিয় সদস্য। ভিকটিম অভয়নগর এলাকার রাজঘাটে অবস্থিত কার্পেটিং জুট মিলস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানা এলাকার জনৈক তোযাম চেয়ারম্যানকে সর্বহারা পার্টির ডলার ও তার দোসররা হত্যা করে একটি বন্দুক ছিনিয়ে নেয়।

এই ছিনিয়ে নেওয়া বন্দুকটি আসামি ডলার বস্তায় ভরে  ‘তেজপাতা আছে’ বলে জনৈক ভ্যানচালক আসলামের ভ্যানে করে যশোরের নোয়াপাড়ায় নিয়ে যেতে বলে। ভ্যান চলার সময় মাঝে মাঝে ইটের ধাক্কায় খটখট আওয়াজ হওয়ায় ভ্যানচালক আসলাম পথিমধ্যে পায়রা বাজারে ভিকটিম মতিয়ার রহমানকে ঘটনাটি বলে। তখন সে বস্তা খুলে একটি বন্দুক পায়, যার গায়ে কয়েকদিন আগে মৃত তোযাম চেয়ারম্যানের নাম লেখা ছিল।

তখন তৎকালীন চেয়ারম্যান আমিন সাহেবের মধ্যস্থতায় বন্দুকটি পায়রা বাজারে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। এলাকায় খবর প্রকাশ পায় মৃত তোযাম চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় ডলারসহ চরমপন্থী অন্য সদস্যরা জড়িত। এই ঘটনায় ডলারসহ তার চরমপন্থী দলের অন্য সদস্যরা ভিকটিমকে শায়েস্তা করার পাঁয়তারা করতে থাকে। ১৯৯৩ সালের ৩ মার্চ দশম রোজার দিন ডলারসহ ২০-২৫ জনের একটি সশস্ত্র চরমপন্থী দল ভিকটিমের ছোট ভাইকে রাইস মিলে বেঁধে রেখে ভিকটিমের পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে।

ভিকটিমকে ঘরের বেড়া কেটে টেনে হেঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে রাত ১০টা নাগাদ মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারা ভিকটিমের বাবার একটি বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মূলত চরমপন্থী  দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় ওই ভিকটিম নিহত হয়।

পরবর্তীকালে আসামির বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে যশোর জেলার অভয়নগর থানায় হত্যা মামলাটি রুজু হয়। মামলা হওয়ার পরপরই গ্রেফতারকৃত আসামি নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফেরারি জীবনযাপন করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নিজের নাম ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে মাহমুদুল হাসান নামে নতুন নাম ধারণ করে ও নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবত দক্ষিণ আফ্রিকায় আত্মগোপনে ছিল।

র‍্যাব জানায়, যেহেতু আসামি দীর্ঘদিন যাবত ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে ছিল, তার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্য পরিচালনা শেষে আদালত ওই মামলায় ২০০০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ডলারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে রায় প্রদান করে।