গণহত্যা দিবসে শহীদদের স্মরণে ঢাবিতে নানা আয়োজন

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে বর্বরোচিত গণহত্যা চালানো হয়েছিল নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। সে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।

শহীদদের স্মরণে সোমবার (২৫মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় ঢাবির স্মৃতি চিরন্তনের পাদদেশে মোমবাতি প্রজ্বালন, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাবি।

স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিতি ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভির হাসান সৈকত।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট ২৫ মার্চের গণহত্যার ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের ওপর যে গণহত্যা চালিয়ে ছিল তা ছিল পরিকল্পিত। পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী বুঝে গিয়েছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে উঠবে এবং এই আন্দোলন তারা দমিয়ে রাখতে পারবে না। এ কারণেই ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী অন্যতম টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল (তৎকালীন ইকবাল হল), ঐতিহাসিক বটতলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে শান্তিপ্রিয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসতম গণহত্যা চালায়। এ ধরনের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনও দেশে কখনও ঘটেনি।

উপাচার্য আরও বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আন্তর্জাতিক গণহত্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী সেটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি রাখে। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এখনও যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা সতর্ক হবে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযানের নামে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী পরিচালিত এই নারকীয় গণহত্যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে অতি দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উপাচার্য আহ্বান জানান।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা এ দেশের মানুষের ওপর যে নিষ্ঠুর, নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অন্যতম সাক্ষী। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তার ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে আলোচনা সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জগন্নাথ হল গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জগন্নাথ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা উপস্থিত ছিলেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল জায়গায় এক মিনিট ‘ব্ল্যাক-আউট’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এছাড়া, গণহত্যা দিবস পালন উপলকক্ষে বাদ জোহর মসজিদুল জামিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার মসজিদগুলোতে এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত/ শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।