‘জেট রোবোটিক’ অ্যাপের অ্যাডমিন কুমিল্লার শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। তিনি ২০২০ সাল থেকে দুবাইতে আছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বসে নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠানোর দায়িত্ব নিতেন তিনি। জেট রোবোটিক অ্যাপের মাধ্যমে গত তিন থেকে সাড়ে ৩ মাসে প্রবাসীদের ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেন শহিদুল। এরপর তিনি ঠিকই চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে টাকা পাঠিয়েছেন। এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে চট্টগ্রামের বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর ‘তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটস’কে। প্রতিষ্ঠানটির ৪৮টি বিকাশ এজেন্ট সিমে আগে থেকেই সমপরিমাণ বা বেশি অনলাইনে টাকা সংগ্রহ করে রাখা হয়। এরপর সংগ্রহ করা টাকা এজেন্টের সিম থেকে অ্যাপ ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে পাঠিয়ে আসছিল সংঘবদ্ধ চক্রটি।
জেট রোবোটিক অ্যাপের ব্যবহারকারী ও মূলহোতা মামুনের দুই সহযোগীসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সার্বক্ষণিক অনলাইন মনিটরিংয়ের সময় মাসখানেক আগে এই অ্যাপ ও বিকাশ এজেন্টের সিমে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য জানতে পারে সিআইডি। এরপর বুধবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাতে চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ডিজিটাল হুন্ডি প্রতারণায় জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার।
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ, ৬টি মডেম ও ২৮ লাখ ৫১ হাজার ২০০ টাকা।
সিআইডি জানায়, এ ধরনের ডিজিটাল হুন্ডি কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কার্যক্রম থেকে বিকাশ কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না। কারণ যেসব সিম ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো বিকাশের এজেন্ট সিম। তাছাড়া অস্বাভাবিক লেনদেন হলে সেটা দেখার দায় বিকাশেরই।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে জেট রোবোটিক অ্যাপের মাধ্যমে। কৌশলে এই অ্যাপ ব্যবহারকারী পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসের কাছে রয়েছে ১১০০ বিকাশ এজেন্ট সিম। এসব এজেন্ট সিমের যেগুলোর পারফর্মেন্স ভালো না, সেসব এজেন্টের সিম জেট রোবোটিক অ্যাপ ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করতো ডিএসও-রা।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শুধু এই জেট রোবোটিক অ্যাপই নয়, এরকম বেশকিছু অ্যাপ বাংলাদেশে চলমান রয়েছে। আমরা এধরনের কিছু অ্যাপের খোঁজ পেয়েছি। তাদের ধরতে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সিআইডি তৎপর রয়েছে।’