গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়ছে সারা দেশ। এরইমধ্যে শনিবার (২০ এপ্রিল) থেকে আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর-চুয়াডাঙ্গায়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দেশের উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম থেকে আসা লু হাওয়া যশোর-চুয়াডাঙ্গা হয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ কারণে দেশের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানে পরিণত হয়েছে যশোর-চুয়াডাঙ্গা। এছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের গত ৭৬ বছরের হিসাবেও দেখা যায় যশোর বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম জায়গা।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের তাপমাত্রা ভৌগোলিক কারণেই বেশি। একদিকে এ সময় সূর্যের কিরণকাল বেশি, অর্থাৎ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত আমরা সূর্যের আলো পাই। তাই এমনিতেই সব উত্তপ্ত হয়ে আছে। এর মধ্যে আবার যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, নওগাঁ এসব এলাকার পেছনে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তার পেছনে আছে বিহার, আছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, তারপর দিল্লি। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের ওইসব অঞ্চলের তাপমাত্রা আরও বেশি। ওখানকার তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৬ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। বাংলাদেশে যে গরম বাতাস বইছে, সেটি মূলত যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও পাবনা হয়ে আসে। এই অঞ্চলটা হলো গেটওয়ে। ওপারের উত্তপ্ত বাতাস এই গেটওয়ে হয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এমনিতেই এখন বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেশি। এর সঙ্গে পশ্চিম দিক থেকে লু হাওয়া এসে দুই বাতাসের সংমিশ্রণে চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকার তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী অঞ্চলের তাপমাত্রা সবসময় অন্য এলাকার তুলনায় বেশি থাকে।
এদিকে গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ এখনও অব্যাহত আছে বাংলাদেশের ওপরে। শনিবার থেকে টানা তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারির পর নতুন করে সোমবার (২২ এপ্রিল) আবারও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আদালতেও আইনজীবীদের কালো পোশাক পরা শিথিল করা হয়েছে। এই আবহাওয়া চলতি মাসজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন অর্থাৎ সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি, আর গত শনিবার চুয়াডাঙ্গায় ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই হিসাবে গত চার দিন ধরে এসব এলাকায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত তাপমাত্রা থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায় সূর্য তাপ ছড়াতে শুরু করার আগে কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষক চাইলে ভোর থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন। আবার কিছু কাজ সন্ধ্যার পর সূর্য ডুবে গেলেও করা যায়। অপরদিকে শহরের মানুষ যাদের আয়ের জন্য বের হতেই হয়, চিকিৎসকরা তাদের যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন, তা চলার কথা বলেন তিনি।