‘সরকার রাস্তার জমি উদ্ধার করতে পারে, নদী কেন পারে না?’

কলকারখানা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ নদীর দূষণ ঘটছে। এসব নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও তথ্যের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। কিছু বিস্তারিত সংবাদ হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কারণ দূষণের উৎস কলকারখানার মালিকরাই সংবাদমাধ্যম দখল করে রেখেছে। এর সঙ্গে জড়িত আছেন সরকারি দলের ব্যবসায়ী অনেক এমপি।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নদীদূষণ রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সভায় প্রধান অতিথিত বক্তব্যে নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবর রহমান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, মিডিয়াগুলো যারা দখল করে আছেন, তাদের অনেকেই নদী দখল করে রেখেছেন। সরকারি দলের অনেক এমপি ব্যবসায়ীরা এর সঙ্গে জড়িত। ৩০টি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী মিলে শীতলক্ষা নদীর দুই পাড়ের সব দখল করে রেখেছে। সরকার যদি রাস্তার জমি উদ্ধার করতে পারে, তাহলে নদী কেন উদ্ধার করে না?

তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্মই হয়েছে 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা' স্লোগান দিয়ে। নদীকে কেন্দ্র করেই আমাদের বেড়ে ওঠা। নদী একটা জীবন্ত সত্তা, তাকে হত্যা করার অধিকার কারও নেই। দেশের প্রায় সব নদী এখন পচনদূষণে অতিষ্ঠ। তাই এখনই অ্যাকশন নিতে হবে।

সভায় রাজধানীর চারপাশের তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, বালু নদসহ বিভিন্ন নদীর দূষণের চিত্র তুলে ধরেন স্থানীয়রা। নদীদূষণ প্রতিরোধ ও বেদখলের লক্ষ্যে মতামত তুলে ধরেন বিশিষ্টজনরা।

ডেইলি স্টারের প্রধান প্রতিবেদক পিনাকী রায় বলেন, মিডিয়া পরিবেশ, নদী রক্ষায় তার কাজ করছে কিন্তু যথাযথ ফলাফল আসছে না। কারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের কাজগুলো করছে না। নদীর জন্য অনেক টাকা বরাদ্দ হচ্ছে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ নদীর পাড়, ল্যান্ডিং স্টেশনসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। নদীর পানি দূষণ বা দখল নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

একাত্তর টেলিভিশনের আহসান হাবীব পলাশ বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন হয়। সেসব প্রতিবেদনে মানুষের কান্না থাকে কিন্তু তথ্য থাকে না। নদীর কাছে গিয়ে নদীর প্রতিবেদন করতে হবে।

নেক্সাস টেলিভিশনের আমিন আল রাশেদ বলেন, প্রতিনিয়ত নদী নিয়ে অনেক প্রতিবেদন ও সেমিনার হচ্ছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে যারা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন, তারা সৎ না হলে কোনও লাভ হবে না। এর জন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির দফতর সম্পাদক মোস্তফা আলমগীর রতন বলেন, গণমাধ্যম কোনও বিষয় নিয়ে উদ্যোগ নিলে রাষ্ট্রেরও তা বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই গণমাধ্যমের কর্মী ও মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

পিআইবির ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর জুলহাস উদ্দিন নিপুন বলেন, ধানসিঁড়ি নদ দেখতে গিয়েছিলাম দেখে মনে হয়েছে খাল। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রেও একই অবস্থা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির নেতা শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, নদী নিয়ে আরও গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। গবেষণা না থাকলে সাংবাদিকরা তথ্য কোথায় পাবেন। নদীদূষণ শুধু ক্ষমাহীন অবহেলা নয়, ক্ষেত্রবিশেষে সংশোধন-অযোগ্য অবহেলা।

আরেক বিশেষ অতিথি সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝরনা সরকার বলেন, সুন্দরবন আমাদের বড় বড় ঝড়ে রক্ষা করেছে কিন্তু এখন অনেকে দখলের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে আগুন লাগাচ্ছে। নদীগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। বিষের কারণে সেই এলাকায় অনেক বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে।

ওয়াটারকিপার্সের কো-অর্ডিনেটর শরীফ জামিল বলেন, পরিকল্পনা প্রণয়নকারী ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও দুর্বল পর্যবেক্ষণব্যবস্থার ফলে দূষণকারীরা সহজেই জবাবদিহি এড়িয়ে যেতে পারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা ও দূষণ না করে সুষ্ঠু উন্নয়ন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর জন্য নীতিনির্ধারকদের সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।