X
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

প্লাস্টিক বন্ধে অভিযানের চেয়ে সচেতনতা ও বিকল্প দরকার

সঞ্চিতা সীতু
০৫ জুন ২০২৫, ০০:১৫আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ০০:১৫

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয় ৪০০ মিলিয়ন টন। এই হিসেব রীতিমত আতকে ওঠার মতো। এই প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে ৭৯ ভাগ প্লাস্টিক সরাসরি প্রকৃতিতে ফেলে দেওয়া হয়। এরমধ্যে অন্তত ৮ থেকে ১২ মিলিয়ন টন সরাসরি ফেলে দেওয়া হয় সমুদ্রে।

গ্লোবাল প্লাস্টিক আউটলুক এর তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় ৯ ভাগ মাত্র রিসাইকেল করা হয়। সমুদ্রে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্লাস্টিকদূষণের ভয়াবহতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকদূষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গতে তুলেও এই সমস্যার সামাধান করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগের তুলনায় অনেক বেশি অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু সেই অভিযানে প্রকৃতপক্ষে পুরো ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব না, দরকার সচেতনতা, সহজলভ্যতা ও বিকল্প ব্যবস্থা।

‘প্লাস্টিকদূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনি সময়’ স্লোগানে পালিত হবে এবারের ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আজ (৫ জুন) সরকারি ছুটি থাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আগামী ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে এই আয়োজন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছাড়াও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেবেন। ওই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান’ও শুরু হবে।

‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা ও পরিবেশমেলা’রও উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়াও তিনি অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিবেশ পদক,  বৃক্ষরোপণ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পদক বিতরণ করবেন।

১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ জুন সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লাস্টিক খুব ধীরে নষ্ট হয়, প্রায় ৪০০ থেকে এক হাজার বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এতে করে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়, কারণ এটি মাটির সঙ্গে মেশে না এবং প্লাস্টিক পোড়ালে বিষাক্ত গ্যাস (যেমন ডাইঅক্সিন) নির্গত হয়, যা বাতাসকে দূষিত করে।

তবে প্লাস্টিক বর্জ্য সরাসরি মানুষের শরীরের ক্ষতি করে। এরমধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এছাড়া প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট ও ত্বকের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

প্লাস্টিকের বদলে পরিবেশের জন্য উপযোগী পণ্য ব্যবহারে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নানা বেসরকারি সংস্থা কাজ করে গেলেও তা খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। বাংলাদেশে সরকারের তরফ থকেও এবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে এতে খুব একটা সাড়া মিলছে না।

পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সারা দেশে পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তারা পাটের ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে এসব ব্যাগ দেওয়া হবে। যাতে করে তারা পলিথিন বাদ দিয়ে পরিবেশসম্মত পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে। এছাড়াও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের মধ্যে পানির বোতল, কলম এবং কটনবাডের মতো পণ্য রয়েছে। তবে নিকট অতীতেও বল পয়েন্ট পেন এর বিকল্প ছিল। কিন্তু এখন সবাই সহজলভ্য হওয়াতে বলপয়েন্ট পেন ব্যবহার করছে। কলমের বিকল্প হিসেবে আগের মতো কালির কলম বা কলমের বাইরের কাঠামো বাঁশ বা কাঠ দিয়ে করছে উন্নত দেশগুলো।

এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসডো দীর্ঘদিন ধরেই প্লাস্টিকের দূষণ রোধে কাজ করছে। প্লাস্টিকের বা পলিথিনের বিকল্প আমরা এত বছরেরও তৈরি করতে পারিনি। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিকল্প অনেক কিছুই আসলে বাজারে আছে। এখন এই বিকল্প আপনি ব্যবহার করবেন কিনা, তা নির্ভর করে আপনার সচেতনতার ওপর।’

তিনি বলেন, ‘যখন আমরা প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করি তখন বিশ্বের অনেক দেশই তা নিষিদ্ধ করেনি। এরপর অনেক দেশ নিষিদ্ধ করেছে এবং সেটা বাস্তবায়নও করে ফেলেছে। আমরা পারছি না। পলিথিন নিষিদ্ধ করার পরপর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খুব কম দামে পাটের ব্যাগ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেটা আমরা ধরে রাখতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকল্প এভেইলেবল নেই বলেই পলিথিন ব্যবহার করতে হবে, এখানে এসেই আমরা আটকে গেছি। অথচ আমরা নিজেরা একটু সচেতন হলেই বিকল্প জিনিস ব্যবহার করা যেতো। নিজস্ব সচেতনতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি।’

ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও সাগরে প্লাস্টিকদূষণের দিক থেকে এখন বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে একটি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে রক্ষা করা এবং জলাবদ্ধতা থেকে শহরগুলোকে রক্ষা করার জন্য বহু আগেই পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কখনও বাজার থেকে এই প্লাস্টিক সরানো যায়নি। কারণ প্লাস্টিকের বিকল্প কোনও যোগান কেউ নিশ্চিত করেনি। বর্তমান সরকার প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে গেলেও এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। কারণ বিকল্প ব্যবস্থা না করে শুধু আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে এটি বন্ধ করা সম্ভব না। বিকল্প সহজলভ্যভাবে সবার কাছে নিতে হবে।’

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
এবার মানুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণুতে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতির দাবি বিজ্ঞানীদের
রাজশাহী মহাসড়কে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, তৈরি হচ্ছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
প্লাস্টিকের অব্যবস্থাপনায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে: ড. ইউনূস
সর্বশেষ খবর
রাজনীতিবিদরা সামনে বড় কথা বলে, কিন্তু ভেতরে নেগোসিয়েশন চলে: সারজিস
রাজনীতিবিদরা সামনে বড় কথা বলে, কিন্তু ভেতরে নেগোসিয়েশন চলে: সারজিস
রাজশাহী ও রংপুরের ১৫১ থানায় অনলাইন জিডির কার্যক্রম চালু
রাজশাহী ও রংপুরের ১৫১ থানায় অনলাইন জিডির কার্যক্রম চালু
কোন ভিটামিনের অভাবে অকালে চুল পেকে যায় জানেন?
কোন ভিটামিনের অভাবে অকালে চুল পেকে যায় জানেন?
কেনিয়া: দাঙ্গাকারীদের পায়ে গুলি করার নির্দেশ দিলেন প্রেসিডেন্ট
কেনিয়া: দাঙ্গাকারীদের পায়ে গুলি করার নির্দেশ দিলেন প্রেসিডেন্ট
সর্বাধিক পঠিত
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সরকারি চাকরিজীবীকে ওএসডি
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সরকারি চাকরিজীবীকে ওএসডি
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
নতুন সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনছেন সামান্তা?
নতুন সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনছেন সামান্তা?