রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় ছিনতাই-ডাকাতির হিড়িক, আতঙ্কে নির্ঘুম নগরবাসী

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর ভেঙে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। থানা থেকে শুরু করে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটের সদস্যরা সংকটে পড়েছেন। এরপর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জেলা ও পাড়া-মহল্লায় ছিনতাই-ডাকাতির হিড়িক পরেছে। ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছিনতাই-ডাকাতি করছে দুর্বৃত্তরা। তাদের অস্ত্রের আঘাতের মারাও যাচ্ছেন অনেকে। নিজের জানমাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ডাকাতি প্রতিরোধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসছেন। মসজিদে মাইকিংয়ের মাধ্যমেও এলাকাবাসীকে সতর্ক রাখছেন স্থানীয়রা।

মূলত সরকার পতনের পর থেকে গত তিন রাত ধরে ছিনতাই ও ডাকাতির আতঙ্ক নিয়ে নির্ঘুম সময় পার করছেন রাজধানীবাসী। মহল্লায় মহল্লায় পাহারা বসিয়ে রাতভর চলেছে ডাকাত প্রতিহতের চেষ্টা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে করা হয়েছে মাইকিংও। নগরীর কয়েক শত ঘরবাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে অস্ত্রসহ কয়েকজন ডাকাতকে ধরে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরও করেছে ছাত্র-জনতা।

তবে এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে চান নগরবাসী। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে রাজধানীর ইসিবি চত্বর এলাকায় ডাকাতির চেষ্টাকালে বেশ কয়েকজনকে ধরে ফেলে এলাকাবাসী। পরে তাদের সেনাবাহিনীর টহল দলের হাতে তুলে দেয় তারা। একই ঘটনা ঘটেছে বছিলা ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়াও মোহাম্মদপুর, আদাবর, উত্তরা, মিরপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ বেশিরভাগ থানা এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট করছে দুর্বৃত্তরা। মধ্য ও কিশোর বয়সীরাই ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ ডাকাতি করছে। ডাকাতির চেষ্টাকালে অস্ত্রসহ বেশ কয়েকজনকে আটকের ঘটনাও ঘটেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাস করা সাংবাদিকরা এসব তথ্য জানান। মিরপুরে সাংবাদিক মেরিনা মিতু বলেন, কয়েক দিন ধরে মিরপুর এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। গতকাল (বুধবার) রাতে ইসিবি এলাকায় কয়েকজন ডাকাতকে অস্ত্রসহ আটক করেছে ছাত্র-জনতা। পরে তাদের সেনা সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক জুবায়ের আহমেদ ও মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক এসএম আব্বাস বলেন, গত তিন রাত ধরে মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, চানমিয়া হাউজিং ও নবোদয় হাউজিংসহ বেশ কিছু এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত রাতে নবোদয় হাউজিং থেকে কয়েকজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। আমিসহ এলাকাবাসী ডাকাত আতঙ্কে সারা রাত নির্ঘুম থাকছে। জনমানুষের মধ্যে সার্বক্ষণিক আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডাকাতি প্রতিরোধে ছাত্র-জনতার সহযোগিতা এবং মসজিদ থেকে করা মাইকিংয়ে উপকৃত হচ্ছেন এলাকাবাসী।

মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যানের বাসিন্দা ফয়সাল হোসেনের বাসায় গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৮/১০ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে টাকা-স্বর্ণালংকারসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এসময় তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে।

রাজধানীর উত্তরার তিন স্পটে ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে এসব ঘটনা ঘটে। উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেট, হাউজ বিল্ডিং ও আজমপুর এলাকায় নিরীহ লোকজনের মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা, জানান ওই এলাকার বাসিন্দা আনুশা অনু ও মামুনুল ইসলাম অপু।

উত্তরখানের বাসিন্দা সাংবাদিক মিজানুর রহমান জানান, ছিনতাইয়ের সময় কয়েকজনকে আটক করে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। সেখান টহলরত আনসার সদস্যরা আটককৃতদের সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করেছেন।

যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, সোমবার সরকার পতনের দিন সন্ধ্যা থেকে রাতভর আওয়ামী লীগের স্থাপনা ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। তবে মঙ্গলবার ও বুধবার সাধারণ মানুষের বাড়িঘরেও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

বাসিন্দারা জানান, থানা পুলিশ না থাকায় দুর্বৃত্তরা ডাকাতি ও লুটপাট করছে। আবার সন্ধ্যার পর থেকে পথচারী ও যানবাহন থামিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এসব ঘটনায় মামলা কিংবা জিডি করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু দিন ধরে সরকার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশসহ অনেক সাধারণ মানুষ মারা গেছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পুলিশ রিফর্ম করা হয়েছে। পুলিশের কার্যক্রম সাময়িক সময়ে জন্য স্থগিত ছিল। তবে আজ থেকে থানাসহ পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক করা হবে।