দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে টানা চতুর্থ দিনের মতো চলছে গণত্রাণ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের ত্রাণ কার্যক্রমে সাড়া দিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক ত্রাণ আসছে। ইতোমধ্যে টিএসসিতে ত্রাণ মজুদ রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় ডাকসু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শারীরিক শিক্ষা মাঠে রাখা হচ্ছে ত্রাণের সামগ্রী।
এরই মধ্যে সংগ্রহ করা গণত্রাণ থেকে কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীসহ বন্যাদুর্গত ১১টি জেলায় অন্তত ৮০ ট্রাক ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। আর্থিক সহায়তায় উঠেছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সেচ্ছাসেবকরা জানান, তাদের সংগৃহীত ত্রাণসামগ্রী বাছাই করে উপহার ব্যাগ করে বন্যাদুর্গত এলাকায় জেলা ও উপজেলা প্রসাশকের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সমন্বয় করে হচ্ছে বিতরণ।
রবিবার (২৫ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর নানা স্থান থেকে অনেকেই ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসছেন। সকালে বৃষ্টির কারণে কিছুটা ভোগান্তি হলেও তা উপেক্ষা করে অনেকেই এসেছেন। জায়গা সংকুলান না থাকায় টিএসসিতে আপাতত শুধু নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে ঢাবির শারীরিক শিক্ষা মাঠে। টিএসসি ও ডাকসুর ভেতরে চলছে ত্রাণসামগ্রী বাছাই ও প্যাকেটিং। স্বেচ্ছাসেবকরা ২৩টি টিমে ভাগ করে কাজ করছেন। একটি টিম অর্থ সংগ্রহ, আরেকটি ত্রাণ সংগ্রহ, কোনোটি জননিরাপত্তা আবার মেডিক্যাল ও মেডিসিন বাছাইয়ে কাজ করছে। টিএসসি গেটে যেসব সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন, তারা কিছুক্ষণ সময় পর পর মাইকে বলছেন, ত্রাণ সাহায্য জিমনেসিয়াম ও ডাকসু ভবনে নেওয়া হচ্ছে। এখানে শুধু নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ কারণে যারা নগদ অর্থ সাহায্য করতে চাইছেন তারা সহজেই টিএসসিতে নির্ধারিত বুথে টাকা দিতে পারছেন।
কথা হয় অর্থ সাহায্য দিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাসনিম ফারিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বন্যার্ত মানুষরা আজ দুঃসময় পার করছেন। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’
ছোট দুই শিশুকে নিয়ে সাহায্য করতে এসেছেন গৃহিণী আফরোজা। তিনি বলেন, ‘বন্যার্ত মানুষের কষ্ট দেখার পর মনে হলো, তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তাই এখানে এসেছি। শিশুদের বললাম, তোমরাও নিজ হাতে সাহায্য করবে, ওরা আনন্দের সঙ্গেই তা করেছে।’
এদিকে টিএসসির ভেতরে গেলে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণসামগ্রী গোছানোর পাশাপাশি তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন। বৃষ্টির হাত থেকে ত্রাণ রক্ষার জন্য তা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, প্রতিটি ত্রাণ প্রস্তুত করে আমরা ট্রাকে তা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া জিমনেসিয়ামেও এখন অনেক ত্রাণ আসছে। আমরা ধীরে ধীরে সব ত্রাণই পৌঁছে দেবো।
টিএসসির দ্বিতীয় তলায় ত্রাণের উপহারের মেডিসিন বাছাই কাজ করছে একটি টিম। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টিমের সেচ্ছাসেবক নিশাত আহমেদ বলেন, ‘বন্যার্তদের সহায়তায় ত্রাণের মধ্যে ওষুধগুলো আলাদা করা হচ্ছে। এখানে ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনেক ডাক্তার আছেন। তাদের পরামর্শে আমরা মেডিসিনগুলো বাছাই করছি। এখান থেকে কয়েকটি মেডিক্যাল টিম করে বন্যা এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। ডাক্তারই এ টিমের সমন্বয় করছেন।’
শারীরিক শিক্ষা মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, রবিবার বিকালের মধ্যে এখানের দুটি গ্যালারি ও অফিস কক্ষ ত্রাণের সামগ্রী দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। এখানের দায়িত্বরত সহ-সমন্বয়ক রেদওয়ান ইসলাম বলেন, ‘টিএসসি, ডাকসু ও জিমনেশিয়াম মাঠও ত্রাণসামগ্রী দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। এখন আমাদের অন্য আরও জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সেচ্ছাসেবক কাজে অনেকেই আসছেন। আমরা তাদের টিম অনুযায়ী ভাগ করে কাজ দিচ্ছি।’
ত্রাণ ব্যবস্থাপনার কর্ডিনেটর শাহিনুর সুমি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করি। এখন পর্যন্ত এখান থেকে ৮০ ট্রাক ত্রাণ বন্যাদুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। আমরা জেলা, উপজেলা প্রশাসক এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এসব ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। সেখানে থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
ছবি: প্রতিবেদক