রাস্তায় দাঁড়ানো নারীদের পেটাতে দেখে পথচারীদের উল্লাস, ভিডিও ভাইরাল

রাস্তার ফুটপাতে এক পুরুষ সবুজ রঙের একটি রড নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একের পর এক নারীকে তাড়া করছে আর পেটাচ্ছে। শুরুতে এটিকে কোনও ‘পাগলের’ কাজ মনে হলেও সেই বিভ্রান্তি কেটে যায়—যখন সেই ব্যক্তি নিজের করা ভিডিও পোস্টও করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে তিনি ওই নারীদের ‘যৌনকর্মী’, ‘শিশু পাচারকারী’ ও ‘ছিনতাইকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যাদের এভাবে পেটানো হলো, এটা স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন। আর নারীনেত্রীরা বলছেন, যাদের পেটানো হচ্ছে, সেই নারীরা যদি অপরাধীও হয়, তাও এভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে, তাদের কোনোভাবে আঘাত করার অধিকার কারোর থাকতে পারে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যদিকে যাওয়ার শঙ্কাবোধও করছেন তারা। 

ভিডিওতে একের পর এক নারীকে তাড়া করে পেটানোর পর ওই ব্যক্তি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলছেন—‘আপনারা কাপুরুষ, আপনারা যদি প্রতিহত না করতে পারেন, তাইলে আপনারা কাপুরুষ। এখানে আমরা হিরো হইতে আসি নাই, এরা খুব জ্বালায়, আমরা ফ্যামিলি নিয়ে হাঁটতে পারি না। আমার বাসা এখানে। এই এলাকায় ছিনতাইকারীর অভাব নাই। আপনারা এই চোর-ছিনতাইকারী, রাস্তার মহিলাদেরকে প্রতিহত করুন, প্লিজ।’

এ সময় ভিডিও-অডিওতে শোনা যায়, উপস্থিত জনতা উল্লাস করে তাকে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানানোর কথা বলছেন।

 এ বিষয়ে নারী অধিকারকর্মী খুশি কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘যদি সেই লোক পাগলও হয়ে থাকে, যারা উল্লাস করছে ও উসকানি দিচ্ছে, তারা সবাই তো পাগল না। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেওয়াও অপরাধ। যে ব্যক্তি এই কাজ করেছেন, তিনি এই নারীদের ‘পতিতা’, ‘ছিনতাইকারী’, ‘শিশুপাচারকারী’ যেই হোক না কেন, শাস্তি দেওয়ার অধিকার তাকে রাষ্ট্র দেয়নি। ফলে তিনি যা করেছেন, তা অপরাধ।’’

এদিকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেক বিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যৌনকর্মী, শিশুপাচারকারী’ অভিযোগ দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের লাঠি দিয়ে (সম্ভবত স্টিলের পাইপ) সাপের মতো পেটাচ্ছে। ওইসব নারী দৌড়ে জান বাঁচাতে পারছেন না। রাস্তায় পড়ে গেছেন এক নারী। এরপরও পেটাচ্ছে তাকে। তিনি পায়ে ধরে মাফ চাচ্ছেন। ঢাকার শ্যামলীতে এমন ঘটনা অন্তত দুই দিন (তার ফেসবুকে অন্তত দুটি ভিডিও পোস্ট করেছে) ঘটিয়েছে এবং সেসবের ভিডিও রেকর্ড করে ফেসবুকে পোস্ট করেছে।’

ভিডিও’র বিষয়ে অবহিত করা হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে সরকার আছে, আইন আছে। আইন হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ। যে বা যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তারা অন্যায় করেছেন। যাদের শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

নারীর অধিকার, নারীর সম্মানের সঙ্গে বাঁচার পথে কতদূর এগোনো গেলো জানতে চাইলে ‘উই ক্যান’-এর সমন্বয়ক জিনাত আরা হক ভিডিওটা দেখেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এখানে যৌনকর্মীকে পেটানো হচ্ছে শুধু তা নয়, নারীর জন্য একটা বার্তা দেওয়ারও চেষ্টা আছে। আমার তথ্য বলছে, এখানে এই নারীদের কাছ থেকে একটা দল চাঁদাবাজি করতো। এখন চাঁদার হাতবদলের ঘটনা ঘটছে এবং সেটার কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি ‘ক্রিয়েট’ করা হচ্ছে। নৈতিকতার মানদণ্ডে নারীকে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং যার পেশিশক্তি বেশি, সে-ই মানদণ্ড নির্ধারণ করছে।’’