বিজয়টা চলে গেছে তাদের হাতে, যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন: ফরহাদ মজহার

কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, তরুণরা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়েছে। ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে তরুণরা যেহেতু বুদ্ধিজীবীতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি, তাই তারা বিজয়ের ফসল তুলে দিয়েছেন ওই চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি) হাতে। এটা বুঝতে হবে। তরুণরা কাজটা শুরু করেছে, জনগণ সাড়া দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজ এই বিজয়টা চলে গেলো তাদের হাতে, যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।’

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দ্য ভয়েস অব টাইমস আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান-২৪: জনআকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) ছাত্র রেদোয়ানুর রহমান কবি ও লেখক আহমেদ ছফার একটি লাইন উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছিল— ‘তখন বুদ্ধিজীবীরা তা জানতো না।’ এই শিক্ষার্থীর এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘২০২৩ সালে আমাদের একটা বই বের হয়েছিল। আমাদের যৌথ প্রযোজনা। বইটির নাম ‘গণঅভ্যুত্থান ও গঠন'’। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট এটা প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের তরুণদের বড় একটা অংশ সেই বই দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সেই বই তারা পড়েছে। সেই বই থেকে তারা দিক নির্দেশনা পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের ৫ আগস্ট বইটি বের হয়েছে। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তাই তরুণরা যেভাবে বলছে, সেটা ঠিক না। বারুদ জমা ছিল, কিন্তু ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর লোক ছিল না। তরুণরা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়েছে। ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে তরুণরা যেহেতু বুদ্ধিজীবীতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নাই, তাই তারা বিজয়ের ফসল তুলে দিয়েছে ওই চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি) হাতে। এটা বুঝতে হবে। তরুণরা কাজটা শুরু করেছে, জনগণ সাড়া দিয়েছে। আজ এই বিজয়টা চলে গেলো তাদের হাতে, যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।’

বুদ্ধিজীবীরা সমাজ বদলায়নি বদলিয়েছে তরুণরা, এমন একটি বক্তব্যের জের টেনে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, এমনটা একজন তরুণ বলেছেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বুদ্ধিজীবীতা ছাড়া কোনও বড় ঘটনা বাংলাদেশে গঠন করতে পারবো না।’

রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনও সম্পর্ক নাই। গণতন্ত্র হলো রাষ্ট্রের একটা ধরন। বাড়িটা হলো রাষ্ট্র আর বাড়িটা কে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটা হচ্ছে নির্বাচন। বাড়ির ঠিক নাই, সেখানে কী নির্বাচন করবেন। এজন্য বারবার বলা হচ্ছে গঠনের কথা। এই সরকারকে এই বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। না হলে মারাত্মক ভুল হবে। তরুণদের বুদ্ধিজীবীরা নেতিবাচক হিসেবে মনে করলে হবে না। এটার চর্চা না থাকলে সেই রাষ্ট্রে হাজার হাতুড়ি পিটিয়ে গণতন্ত্র আনতে পারবেন না। গণঅভ্যুত্থানকে কখনও পুরনো সংবিধানে ঢোকানো যায় না।’ আর তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। আমরা চেয়েছিলাম পুলিশকে সংস্কার করা। তা হয়নি। পুলিশ না আসলে তাদের পলাতক ঘোষণা করা। আগে পুলিশ মাসে লাখ টাকা কামাতো। তারা তো এই দুই- চার টাকার জন্য ফিরে আসবে না। আগে থেকেই এটা ভাবা উচিত না। তরুণরা ভেবেছিল বিপ্লব ডিনার পার্টি, এটা ডিনার পার্টি না।’

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘ছাত্ররা একটি নাগরিক কমিটি করেছে। কিন্তু প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল সেটাকে সন্দেহের চোখে দেখছে।  কারণ তারা বলছে, তোমরা নাগরিক কমিটি করো, কিন্তু এই সরকারের ক্ষমতা নিয়ে আরেকটি কিংস পার্টি হইও না। এখন যেটা দরকার, সেটি হলো বিপুল বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন।  চিন্তার পরিবর্তন এবং সেই পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র গঠন করা। যে ভিত্তিটা কারও পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব হবে না। এবং সেই ভিত্তি তৈরি হলে কোনও দেশের পক্ষে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হতে কোনও বাধা থাকবে না।’

ভয়েস অব টাইমসের সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— সাংবাদিক ওলীউল্লাহ নোমান, জামায়াত ইসলামির পল্টন থানার আমির শাহীন আহমেদ খান, লেখক ও গবেষক সারোয়ার তুষার, সাংবাদিক নেতা শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।