বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। সারা বিশ্বে প্রতিবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর দিনটি পালিত হয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন শান্তির সোপান’। দেশের পর্যটন স্পটগুলো নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন করার পাশাপাশি সেখানে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি ভ্রমণপিপাসুদের। তারা বলছেন, স্পটগুলো পর্যটকদের কাছে নিরাপদ করে তুলে ধরতে পারলেই দেশের পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধ হবে। এমনকি দেশের বাইরে থেকেও আমাদের দেশে প্রচুর পর্যটক আসবে।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য নানা উদ্যোগ তারা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিরাপদ করতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে মনোযোগী হলে দেশের পর্যটকরা বিদেশের প্রতি আকৃষ্ট কম হবেন।
রাজধানীর বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা তানজিন মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের দেশের পর্যটন খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য দেশ পর্যটক টানতে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালায় আমাদের সে রকমটা নেই। এছাড়া আমাদের পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তার প্রশ্নটিও সামনে এসে যায়। তাছাড়া সেখানে খাবারসহ জিনিসপত্রের দামও অনেক বেশি রাখে। তিনি বলেন, সরকার এসব বিষয়ে যত্নবান হলে দেশের পর্যটন খাত আরও সমাদৃত হবে।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রয়েছে, তিন পার্বত্য জেলা রয়েছে। এগুলো নিরাপদ করতে হবে। সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। তাহলে দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে পর্যটক আসবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পর্যটন দিবস এলে আমরা ট্যুরিজম নিয়ে কথা বলি। আর অন্যান্য সময় এটি আমাদের মাথায় থাকে না। আমাদের ভাবনাতেও নাই। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি দিনই এটি নিয়ে ভাবা উচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দেশে ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। অথচ ফ্লাইট ভরে মানুষ থাইল্যান্ড, মালদ্বীপসহ অন্যান্য জায়গায় যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব যে সরকারি টাকায় করতে হবে এমন তো না। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে। কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির অপার সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারি। এজন্য শুধু সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সৌদি আরব ২০১৯ সালে পর্যটনের ব্যাপারে মার্কেটিং শুরু করে। এখন তারা কোথায় চলে গেছে! আসলে আমাদের সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। সদিচ্ছা থাকলে এই সেক্টরে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রচার-প্রচারণার জন্য বড় বাজেটের প্রয়োজন হয়। আমাদের সেই সামর্থ্য নাই। তবে এখন আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে প্রচারের জন্য উদ্যোগী হচ্ছি। আর নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে তারা দেখে।
তিনি বলেন, আসলে জিনিসপত্রের দাম তো আমরা নির্ধারণ করি না। যখন পর্যটক বেশি থাকে সেই সময় দাম একটু কম হয়। আর কম হলে দাম বাড়ে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে নিরাপত্তাসহ নানান সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বর্তমানে একটি বিশেষ নম্বরও চালু করা হয়েছে। দেশের যে কোনও প্রান্তে সমস্যায় পড়লে পর্যটকরা ওই নম্বরে যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারবে। তিনি বলেন, হয় তো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, তবে আমরা সার্বক্ষণিক পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছি।
এদিকে, পর্যটন দিবস ঘিরে এবার দেশব্যাপী নানান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে নানা আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানান প্রতিষ্ঠান।
কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে, র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারও দিবসটি উপলক্ষে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন এলাকায় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সামনের সড়কে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি।
এছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারও আলোচনা সভার আয়োজন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, বেবিচকের সদর দফতর অডিটোরিয়াম হলে এই দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করা হবে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করা হয়।