‘১৫ বছর ধরে গণমাধ্যমে মুজিব-বন্দনা দেখেছি’

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ১৫ বছর ধরে আমরা গণমাধ্যমে মুজিব বন্দনা দেখেছি। মুজিব মহামানব, মুজিব মহানায়ক, বাংলাদেশ মানে মুজিব, স্বাধীনতা মানে মুজিব, মুজিবের বিশেষণের কোনও শেষ নেই। সারা দেশে মুজিবের মূর্তিতে ভরে গেছে। বিপ্লবের পর ছেলেপেলে মুজিবের মূর্তি ভেঙে দিয়েছে, এটা সঠিক কাজ করেছে। আমার বয়স কম থাকলে, আমি উপস্থিত থাকলে, আমিও যোগদান করতাম।

রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘ফ্যাসিবাদী বয়ান নির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা: একটি পর্যালচোনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের জন্য কয়েকটি বিষয়ের প্রয়োজন হয়, একটা বিষয় হলো কাল্ট তৈরি করা, পাবলিক এনিমি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নিয়ন্ত্রিত বিচার বিভাগ এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে বয়ান ও প্রচারণা। ৭২ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান এ কাজগুলো করেছে, পরে শেখ হাসিনা করেছে।

কাল্ট তৈরির কাজটা মিডিয়া করেছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ইসলামের প্রতি একটা বিদ্বেষ তৈরি করা হয়েছে, ডেমোনাইজ করা হয়েছে, ডেমোনাইজের যে কার্ডটা খেলা হয়েছে সেটা জঙ্গি কার্ড, ইসলামি জঙ্গি কার্ড। গ্রামের সব কৃষক দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের ধরে এনে, তাদেরকে ডিবিতে আটকে রেখে, গুম করে, তাদের রেকর্ড দেখানো হতো না। তাদেরকে একটা বাড়িতে ট্রান্সফার করা হতো। যেমন- ঢাকা শহরের জাহাজবাড়ি। জাহাজবাড়িতে তাদের রেখে জঙ্গি আস্তানা বলে গণহত্যা চালানো হয়েছে। জাহাজবাড়ি কিছুই না, এটা সরকারের জঙ্গি কাজ, পুরোটাই জঙ্গি কাজের প্রচারণা। সমাজে ঘৃণার মাধ্যমে বিভাজন তৈরির কাজও মিডিয়া করেছে।

বাংলাদেশর মিডিয়ায় ভারতীয় আগ্রাসন রয়েছে এবং তা স্বাধীনতার পর থেকে এখনও চলমান বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভারতের বয়ানের বিরুদ্ধে লড়াই করবার জন্য আমরা আবার ‘আমার দেশ’ পুনঃপ্রকাশ করছি, ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হবে। আমার দেশ স্বাধীনতার কথা বলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বলে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে।

ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক শেখ মো. আরমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন— প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।

শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে পত্রিকাগুলো, টেলিভিশনগুলো বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেওয়ার জার্নালিজম করেছেন, তা নিজেরা নিজেরা ইনভেস্টিগেশন করেন। জানাবেন আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা চাই না কোনও টিভি স্টেশন বন্ধ হয়ে যাক, আমরা চাই না কোনও নিউজপেপার বন্ধ হয়ে যাক। আপনারা যে ক্ষতি করেছেন, আপনাদের যে দায়, তা নিজেরা ইনভেস্টিগেট করবেন। কারা কারা জড়িত ছিল, কেন এই ফেইলর, কেন সব গ্রুপের রাইটসের কথা তুলে ধরতে পারি নাই। নেশন বিল্ডিংয়ের কথা বলছি, যে নতুন বাংলাদেশ বানানোর কথা বলছি, তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। না হয় দেখা যাবে— একটা গোষ্ঠী এসে সেই আগের কাজ করবে, লেজিটিমাইজ করবে, চাটার গোষ্ঠী আবার একি ধরনের জার্নালিজম করবে।