পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে গিয়ে ছয়টি রাখাইন পরিবারের ২৮ জন ব্যক্তিকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার কোনও সুরাহা করছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশিষ্টজনরা।
সোমবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ‘উচ্ছেদকৃত ৬টি রাখাইন পরিবার ও নাগরিক উদ্যোগ’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এই অভিযোগ তোলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, গত ৩ বছরেও উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কোনও সুরাহা দিতে পারেনি। তাদের বসতবাড়ি, পুকুর, ধর্মশালাসহ বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করার পর পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও তা পালন করা হয়নি।
তিনি বলেন, উচ্ছেদ করা ৬টি পরিবার পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত বাড়িভাড়া হিসেবে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩৭ মাসের বাসাভাড়ার টাকা বাকি রয়েছে।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাছাই করা হয় রাখাইন, আদিবাসী বা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জমিকে ঘিরে। হিসেব করে দেখা গেছে, এসব স্থাপনার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জমির মালিক এ শ্রেণির মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জমি অধিগ্রহণ আইনের চেয়ে বাংলাদেশের অধিগ্রহণ আইন জনবিরোধী ও খারাপ। এ আইনে হাইকোর্টে মামলা করা যায় না। এটি সংবিধানবিরোধী। এসব জমির মালিকরা অধিগ্রহণের টাকা পায় না ও অন্যরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিয়ে যায়। এসময় ৬ পরিবারের যতটুকু জমি নেওয়া হয়েছে সেই পরিমাণ টাকা ও অন্যান্য যা ক্ষতি হয়েছে তার সমপরিমাণ জরিমানা দিতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
উচ্ছেদ করা পরিবারের সদস্য চিং ধামো রাখাইন বলেন, পায়রা বন্দর নির্মাণের জন্য দ্বিতীয় দফায় জমি অধিগ্রহণের সময় আমাদের ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বসতভিটা অধিগ্রহণ করা হয়। আমাদের সঙ্গে আগের কোনও আলোচনা ছাড়াই আমাদের বসতবাড়ি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের পর শুধুমাত্র গাছপালা ও বসতবাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমরা কিছু টাকা পেয়েছি কিন্তু ভোগদখল করা জমির ক্ষতিপূরণ এখনও পাইনি।
এসময় তিনি ৭ সমস্যা ও ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১। রাখাইনদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে কলাপাড়ার কোনও রাখাইন পল্লির পাশে পুনর্বাসন করতে হবে।
২। পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি দেওয়া মাসে ৫ হাজার টাকা দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
৩। অন্যান্য রাখাইন পল্লীর বেদখলকৃত শ্মশানগুলো পুনরুদ্ধার করে, সেগুলোর যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে রাখাইন জনগোষ্ঠীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
৪। রাখাইনদের ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থানগুলো নিজস্ব সংরক্ষিত এলাকা কোনোভাবেই অধিগ্রহণ করা যাবে না
৫। রাখাইন এলাকায় রাখাইন জনগোষ্ঠীর সম্মতি ছাড়া জমিতে কোনও প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।
আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, মেইনথিন প্রমীলা, জাকির হোসেন ও মংচোথিন তালুকদার।
তারা বলেন, উন্নয়নের নামে ভূমি অধিগ্রহণের আড়ালে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ও নিঃশেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। আলোচনা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও জানায় তারা।