রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অশান্ত জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বুনিয়া সোহেল ও চুয়া সেলিম গ্রুপের সংঘর্ষ এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। গত তিন মাসে ক্যাম্পে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ও হাত বোমার আঘাতে শিশুসহ সাত জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে বিস্ফোরণে আঘাতে মারা গেছে দুই জন। আহত হয়েছেন শিশু-নারীসহ অন্তত শতাধিক মানুষ। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি অর্ধশতাধিক ককটেল ও হাত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বোমা একই ক্যাম্পে বিভিন্ন আস্তানায় বসে বানাচ্ছে দুই গ্রুপের অন্তত ১০ জন কারিগর।
সবশেষ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) মধ্যরাতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল-বোমার আঘাতে মারা যান বুনিয়া সোহেল গ্রুপের সদস্য রাজ ওরফে একগাল। একইদিন সকালে ক্যাম্পের চার নম্বর সেক্টরে ‘শাকিল বুক’ স্টোরের পাশের ময়লায় ভাগাড়ে পড়ে থাকা ককটেল বিস্ফোরণে চার পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ আহত হন সাত জন। এ ঘটনায় এখনও পাঁচ জন সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জানা যায়, ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর অভিযানের খবরে ময়লার ভাগাড়ে চুয়া সেলিম, গালকাটা মুনু, শাহ আলম, সোনারুল এরশাদ ও আলতাফের ছেলে ইরফান বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ডজনখানেক ককটেল-বোমা ফেলে যায়।
ক্যাম্পের ভেতরে কারা বোমা বানাচ্ছে, এসব বোমা কারা ব্যবহার করছে, কারা নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে–ক্যাম্পের বাসিন্দাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, চুয়া সেলিমের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুই, চার ও আট নম্বর সেক্টরে বোমা বানাচ্ছে পাঁচ জন কারিগর। এরমধ্যে দুই নম্বর সেক্টরে বোমাকারিগর উল্টা সালাম ও পাপ্পুর ছেলে সনু, চার নম্বরে সোহেল কসাই এবং আট নম্বর সেক্টরে গালকাটা মনু ও কালা ইমরান বোমা বানায়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে চুয়া সেলিম গ্রুপের এক সদস্য বলেন, ‘গত মাসে হাত বোমা ও ককটেল বানানোর জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় চুয়া সেলিম গ্রুপের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ও পাঁচ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা লাড্ডু কসাই।’ তিনি বলেন, ‘বোমা অনেকেই বানাতে পারে। তবে এটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখন অল্প কয়েকজন কাজ করে। এর আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বোমা বানাতে গিয়ে একজন মারা যায়।’
এর আগে ২৪ অক্টোবর হুমায়ুন রোডে ক্যাম্পের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে দুই জন আহত হন। আহতরা হলেন– মোটর মেকানিক ওমর ফারুক (২০) ও মাংসের দোকানের কর্মচারী মো. লিটন (৩০)।
আহত লিটনের আত্মীয় মিজানুর বলেন, ‘ক্যাম্পে প্রথম বোমা বিস্ফোরণে রাসেল (৮) নামে এক শিশু মারা যায়। জেনেভা ক্যাম্পের জন্মলগ্ন থেকে কখনও আগ্নেয়াস্ত্র বা ককটেল বোমা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এমন অশান্তি ক্যাম্পে আগে কখনও দেখেনি বাসিন্দারা।’
জেনেভা ক্যাম্পের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সরদার ইব্রাহিম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণে চার জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। তারা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পর থেকে এখনও অনেকেই ময়লা পরিষ্কারের কাজ করতে চাইছে না। কোন ময়লায় ভাগাড়ে না অবিস্ফোরিত ককটেল পড়ে রয়েছে, এটা তো দেখে বোঝা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বোমা কারিগরদের তথ্য সংগ্রহ করছি– কারা বোমা বানাচ্ছে এবং কাদের নিয়ন্ত্রণে বোমা বানানো হচ্ছে, কারা ক্যাম্পকে অশান্ত করে তুলছে। ক্যাম্পের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যতদিন পর্যন্ত ক্যাম্পে অরাজকতা চলবে ততদিন আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।’