গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নারীর কণ্ঠ কোথায়

‘ঝুলে আছে’ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন

প্রায় এক মাস আগে নারী বিষয়ক কমিশনের প্রধানের নাম ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় কোনও কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হতে পারে— সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছুই বলতে পারছেন না কেউ। এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে সংস্কার ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীদের যুক্ততার বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন অধিকার সংগঠন ও নারীনেত্রীরা।

বাংলাদেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় যত আইন আছে— তার বাস্তবায়নের জায়গায় বেশ কিছু বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছেন নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দৃশ্যমান পরিসরে নারীর প্রতি অবমাননাকর বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে ওভারব্রিজের ওপর নারীকে পেটানো, কক্সবাজারে নারীকে কান ধরে ওঠবস করানো, বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের মারধরসহ বেশ কয়েকটি নেতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে।

নারীর উত্তরাধিকার বিষয়ক জটিলতা দীর্ঘদিনে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের যে আকাঙ্ক্ষা, সেখান থেকেই এই কমিশনের অপেক্ষায় আছেন নারীনেত্রীরা। কিন্তু এক মাস পার হয়ে গেলেও এখনও এ বিষয়ে কোনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।

১৭ অক্টোবর নারী অধিকার বিষয়ক কমিশনসহ ৪টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। নারী অধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান করা হয় বিশিষ্ট নারীনেত্রী শিরিন হককে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল—কমিশনের মেয়াদ প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দিন থেকে ছয় মাস। কমিশন প্রধান এবং এর সদস্যরা পূর্ণকালীন হিসেবে কমিশনে কাজ করবেন। এ সময়ে তারা অন্য কাজ থেকে বিরত থাকবেন। তাদের কাজের জন্য অফিস এবং সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তারা প্রতিবেদন দেবেন প্রধান উপদেষ্টাকে।

সংস্কার কমিশন নিয়ে কী ভাবছেন—জানতে চাইলে কমিশনের প্রধান হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়া শিরিন হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও প্রজ্ঞাপন হয়নি। এ বিষয়ে এখনই ভাবছি না।’ কেন এখনও প্রজ্ঞাপন হয়নি জানেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কারও কথা হয়নি। আমি নিজেও তো ঝুলে আছি।’

কমিশনের নাম ঘোষণা হওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি করতে এত সময় লাগে কিনা প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটির বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। তবে প্রজ্ঞাপনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন লাগে। উনি দেশের বাইরে আছেন।’

কেন নারীদের বিষয়ে এসেই বারবার থমকে যেতে দেখা যায়— জানতে চাইলে ‘উই ক্যান জোট’র সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্দোলনে অনেক স্টেক ছিল, শুরুতেই সবাই যার যার দাবি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের দাবিতে নারীর অধিকারের বিষয় আসেনি। নারী প্রশ্ন কী বদলাবো, কীভাবে বদলাবো সেই আলাপ হয়নি। নারীর যুক্ততা হুট করে বসিয়ে দেওয়ার বিষয় না। ধারাবাহিক আলাপের মধ্য দিয়ে প্রতি জায়গায় নারীর যুক্ততা নিশ্চিত করতে হয়। আন্দোলনকালে এই আলাপগুলো হওয়ার কথা, সেটা হয়নি। সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ যদি নিশ্চিত না হয়, তবে সে এই সিস্টেম থেকে ছিটকে পড়বে। তবে শুধু নারীকে বিভিন্ন জায়গায় অন্তর্ভুক্ত করে সমাধান হবে না। উন্নয়নটা সবার এটা যদি না ভাবতে পারি, তাহলে সবার চাহিদাটা জানতে হবে। সেটা পূরণ করতে হবে।’

এর মধ্যে ‘নারীরা কোথায় গেলো’ শিরোনামে গণঅভ্যুত্থানের নারীদের সংলাপের আয়োজন করেছে এমপাওয়ারিং আওয়ার ফাইটার্স ও লড়াকু ২৪। কেন ‘নারীরা কোথায় গেলো’ ভাবছেন, জানতে চাইলে সংগঠক কানিজ ফাতেমা মিথিলা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থানে সর্বস্তরের নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেছি আমরা। যারা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করছে তাদেরও বেশিরভাগ নারী। আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এই নারীদের স্বর (কণ্ঠ) আমরা শুনতে পাচ্ছি না। বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাদের কেউ আমন্ত্রণ জানায় না। চেনা সেলিব্রেটিদেরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডাকা হয়। আমরা এটা ভাঙতে চাই। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া গণনারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের কথা শুনতে চাই আমরা।’