বাংলা একাডেমির আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বইমেলা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। মেলার এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ।
সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি গিয়ে দেখা যায়, হাতুড়ি-পেরেকের ছন্দে নিরলস কাজ করছেন শ্রমিকরা। স্টল এবং প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের কেউ মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করছেন, কেউ স্টলের মাপ হিসাব করছেন, আবার কেউবা বাঁশ-কাঠ এবং ইট দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন। আবার অনেকে বিদ্যুৎ সংযোগ, বাতি লাগানো, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নানা আনুষঙ্গিক কাজ করছেন।
এর আগে, স্টল এবং প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। বড় এবং স্বনামধন্য অনেক প্রকাশনীর বরাদ্দকৃত স্টল বা প্যাভিলিয়নের পরিমাণ নিয়ে ছিল ক্ষোভ ও অসন্তোষ। আবার বিগত সরকারের দোসর হিসেবে পরিচয় পাওয়ায় কোনও কোনও প্রকাশনীর স্টল না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে বইমেলা পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সব সমস্যা এবং বিতর্ককে ছাপিয়ে প্রাণের এই মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে।
সেখানে আরও বলা হয়, বইমেলার প্রতিটি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার স্বার্থে আর্চওয়ের ব্যবস্থা থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণে একাডেমির নিজস্ব ক্যান্টিন ও একাডেমি কর্তৃক বরাদ্দকৃত খাবারের স্টল থাকবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী মানসম্মত খাবারের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। বইমেলার প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়াও বইমেলায় নারী ও পুরুষের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। তথ্যকেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে মা ও শিশু কর্নার থাকবে। বইমেলা প্রাঙ্গণে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকবে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য ‘নতুন বই উন্মোচন মঞ্চ’ নামে একটি নির্দিষ্ট স্থানের ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে ‘গুণগতমান বিচার’-এ সর্বাধিক সংখ্যক বইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের ‘নান্দনিক অঙ্গসজ্জা’য় সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে তিন ক্যাটাগরিতে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
মেলায় কারা অংশ নিচ্ছে এবং স্টল প্যাভিলিয়নের ভাড়া সম্পর্কে বাংলা একাডেমি জানায়, এবার মেলায় প্রায় ৬০০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলায় স্টল ভাড়া এক ইউনিট ১৫ হাজার ১৮০ টাকা, দুই ইউনিট ৩১ হাজার ৬২৫, তিন ইউনিট ৫৯ হাজার ৮০০, চার ইউনিট ৮৩ হাজার ৪৯০ ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া (২০ x ২০) ১ লাখ ৫১ হাজার ৮০০, (২৪ x ২৪) ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং মিডিয়া ও স্বাস্থ্য সেল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা।
বইমেলার প্রস্তুতি ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে 'বইমেলা পরিচালনা কমিটি-২০২৫'-এর সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলা একাডেমির কর্মীরা এবং স্টল যারা বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের কর্মীরা বইমেলাকে সুন্দর ও প্রাণবন্ত করতে রাতদিন কাজ করছেন। বলা যায় সব কাজই ঠিকমতো এগোচ্ছে।
প্যাভিলিয়ন এবং স্টল বরাদ্দ নিয়ে যে বিতর্ক ছিল সেই বিষয়ে সরকার আমিন বলেন, শুরুতে প্যাভিলিয়ন নিয়ে যেই বিতর্ক ছিল সেগুলো সমাধান হয়ে গেছে। অলমোস্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন কারা কারা স্টল বা প্যাভিলিয়ন পাবে সবাই জেনে গেছে। সবাই অলরেডি স্টল প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মেলার অবকাঠামোগত কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেলার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কারা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসবে, কারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসবে সেই তালিকা অলরেডি বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন, শিশু কর্নার এসব আগের জায়গাতেই থাকবে। গতবারের বইমেলা যেমন ছিল বা যে আঙ্গিকে হয়েছে সেখান থেকে কিছুটা সংযোজন এবং বিয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিবছর জার্নিম্যান বুকস প্রকাশনী বইমেলায় অংশগ্রহণ করলেও এবার কেন তাদের স্টল বা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সরকার আমিন বলেন, এটা মেলা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত।
তবে জার্নিম্যান বুকসকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলা পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জার্নিম্যান বুকস আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠান। এটা কবি তারিক সুজাত পরিচালনা করেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।