ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকালেও চলছে বুলডোজার। শেখ মুজিবুর রহমানের তিনতলা বাড়িটির সামনের অংশ অনেকটাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সকাল আটটায় সেখানে গিয়ে দেখা যায় বুলডোজার অবিরাম ভাঙার কাজ করে যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি।
সেখানে উপস্থিত কয়েকজন জানান, ভবনের বাকি অংশ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে সমান না করা পর্যন্ত কাজ চলবে।
পরে বিক্ষুব্ধদের একটি দলকে সেখানে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তারা 'নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার', 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ', 'ঢাকা না দিল্লি, ঢাকা ঢাকা', 'ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান', স্বৈরাচারের ফাঁসি চাই, ছাত্রলীগের ফাঁসি চাই'সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
সকালে শেখ মুজিবের ভাঙা বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। এক দল মানুষকে বাড়িটি থেকে দরজা-জানালা, ইট, লোহা, পাইপসহ অবশিষ্ট জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যে যেমন পারছে বাড়ির ভেতর থেকে জিনিসপত্র খোঁজে খোঁজে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলা ট্রিবিউনের একজন সংবাদকর্মী সেখানে গিয়ে দেখতে পান, বাড়িটির ভাঙা অংশ থেকে হেকসো ব্লেড দিয়ে রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে এক ব্যক্তি। কেউ কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে কনক্রিট ভেঙে সংগ্রহ করছে রড। বাড়ির ভেতরে পড়ে থাকা একটি পোড়া গাড়ি থেকে ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে কয়েজনকে। পরে যানবাহনে করে এসব মালামাল তাদেরকে সরাতে দেখা গেছে।
আপনাকে কে এখানে এনেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত দেড়টার সময় ঘুম ভাঙিয়ে আমার ম্যানেজার আমাকে এখানে আসতে বলেছে। কাজটির কথা আমাকে আগে বলা হয়নি, এখানে আসার পর বাড়ি ভাঙার কাজটি করতে বলা হয়।
গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসার সামনে এসে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। সে সময় বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রবেশমুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে রাতেই বাড়ির সামনে বুলডোজার আনা হয়।
এরআগে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টার দিকে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ‘ছাত্র-জনতা আন্দোলন’ নামে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ খবর পাওয়ার পরপরই বিকালে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল উত্তেজিত জনতা।
ছবি: রাকিবুল ইসলাম