আইনি প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ইন্টারপোলসহ অন্যান্য যেসব প্রক্রিয়া আছে, সেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। রবিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন। দুদকের মামলার আসামি শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত আনার বিষয়ে দুদক কোনও উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা— একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোমেন বলেন, ‘দুদক হচ্ছে প্রসিকিউটর। অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু আমরা করি না। এটা আদালতের কাজ। দ্রুত সময়ে আদালত থেকে ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট আপনারা পাবেন। আসামি অ্যাবসকন্ডিং (পলাতক) হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সে আসামিকে ফেরত আনার জন্য প্রক্রিয়া আছে। ইন্টারপোলসহ অন্যান্য যেসব প্রক্রিয়া আছে, আমরা সেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করবো। আন্তর্জাতিক প্রসিউকিউটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা সেভাবে আগাবো। আমার কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত একজন সাধারণ জনগণের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যিনি পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন, তার জন্য আমার যে প্রক্রিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার জন্যও একই প্রক্রিয়া। কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ প্রধানমন্ত্রী নন, সেক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রমের কোনও হেরফের নেই। আদালতই বলবেন যে কীভাবে আমরা কাজ করবো।’ 

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আরও যেসব আসামি চলে গেছেন, আপনারা দুদকের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করুন। সব আসামিকে ধরে রাখার সেই ক্ষমতা দুদকের হাতে নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি যখনই আমাদের হাতে সংবাদ আসছে, তখন আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য এজেন্সি আছে, তারা যেনও ওই আসামিকে কিংবা অভিযুক্তকে দেশ থেকে বের হতে না দেন, সে চেষ্টা করছি। এখনও এমন কয়েকজন আসামি আমাদের হিসাবের মধ্যে রয়ে গেছেন।’

সেক্ষেত্রে দুদক গ্রেফতার অভিযান চালাবে কিনা জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদক কিন্তু পুলিশি প্রতিষ্ঠান না। দুদককে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হয়। আমরা সবাই মোটামুটি জানি, বড় বড় আসামিরা কে দেশে আছে, আর কে দেশে নাই। সেক্ষেত্রে যারা দেশে নাই, তাদের একটা আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফিরিয়ে আনতে হবে। যেটা একটা কঠিন প্রক্রিয়া। এটা আমাদের শিকার করতে হবে। আর যারা দেশে আছেন তাদের প্রতি আমরা কতটা সদয় আর কতটা নির্দয় বা কতটা অবজেকটিভ, সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব আমরা তাদের ধরার চেষ্টা করছি।’

দুদক আগের নিয়মেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের বিরুদ্ধে কাজ করছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন রুলিং পার্টি কারা। আমরা কাজ শুরু করি ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। এ পর্যন্ত দুদক থেকে ছাড়া পেয়েছে এমন একটা নামও বলতে পারবেন না। আদালত থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আদালত তো আমার বিষয় না। দুদক দল নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কোনও বিশেষ দলের প্রতি পক্ষপাত মূলক আচরণ করিনি।’ 

এসময় পাশে থাকা দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘দুদক দুশমন দমন কমিশন নয়। দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমাদের কাজ দোষী চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়ে কোর্টের কাছে তথ্য-উপাত্তসহ তাদের সোপর্দ করা। এরপর কোর্ট বিচার করবেন।’

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত একটিমাত্র মামলাতে কিছু টাকা ফেরত এসেছে। সে টাকা আনতে যে ব্যয় হয়েছে, তা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনাটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি অন্তত কিছু অংশ হলেও যাতে ফেরত আনতে পারি।’