বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আরিফ হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিন আদালত প্রাঙ্গণে সৈকত বলেন, যারা এ দেশের সোনালি অর্জন, তারা ছাত্রলীগের হাত ধরে এসেছে। এ দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেগে উঠবে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে, আজ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে সৈকতকে আদালতে হাজির করা জন্য হাজত খানা থেকে বের করা হয়। আদালতে ওঠার সময় তাকে বেশ হাস্যজ্জ্বল দেখা যায়। আশেপাশে পরিচিত-অপরিচিত সবার খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে মো. মাহবুবুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। পরে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যাত্রাবাড়ী থানার আরিফ হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এ সময় সৈকত বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গর্বিত কর্মী। যাত্রাবাড়ী এলাকায় আমি কখনও যাইনি। এ সময় আইনজীবীরা বলে ওঠেন, নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ। তখন তিনি বলেন, ছাত্রলীগ খুনি দল না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, আছি। আমি ছাত্রলীগে থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিও হত্যাকাণ্ড হয়নি। আইনজীবীরা তাকে সন্ত্রাসী, খুনি বলে চিৎকার করে থামতে বলেন। তবুও কর্ণপাত করেননি সৈকত।
সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান তাকে কথা চালিয়ে যেতে বলেন। এরপর সৈকত বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, তবে বলতে গেলে আবার হট্টগোল দেখা যায়। তখন তাকে থামতে বলা হয়।
এ সময় শাজাহান খান আদালতকে বলেন, একজন বন্দি কথা বলতে গেলে আইনজীবীরা যদি এভাবে থ্রেট করেন, এর বিচার আপনাকে করতে হবে। একজন বন্দি কি কথা বলতে পারবে না?
এ সময় সৈকত বলেন, আমি আইনের প্রতি বিশ্বাসী। আমি কি কথা বলতে পারবো না?
পরে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আপনাদের কথা বলার অনেক সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আসামিদেরও দায়িত্ব রয়েছে। এমন কোনও কথা বলবেন না, যেন আদালতের পরিবেশ নষ্ট হয়।
এরপর শুনানি শেষে সৈকতের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
বেলা ১১টা ৫ মিনিটে শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে আসামিদের সিএমএম আদালতের দ্বিতীয় তলা থেকে হাঁটিয়ে হাজত খানায় নেওয়ার পথে সৈকত বলেন, বাংলাদেশকে যারা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করেছে, তাদের বেশি অপমাণ করা হচ্ছে। সামনে আমাদের দিন ভালো আসবে।
আদালতের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ করি এবং আমি গর্ব করি। যতদিন ছাত্রলীগের রক্ত ও আওয়ামী রক্ত স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে, ততদিন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বলবো, ছাত্রলীগ কখনও ভয় করে না। শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। শেখ হাসিনাই এ দেশের মানুষের দায়িত্ব নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড হয়নি বলে আদালতে দাবি করেন সৈকত। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও হত্যাকাণ্ড হয়নি। এটার এখনও কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি। বর্তমানে কোনও আইনের শাসন নেই।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ আগস্ট রাতে তানভীর হাসান সৈকত রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার হন।