রমজানে এবং ঈদের কয়েক দিন পর পর্যন্ত বাজারে সব রকমের সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। মৌসুমি সবজি পর্যাপ্ত থাকায় রোজার মাসে সব মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল বাজার। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবারও চড়া হচ্ছে সবজির বাজার। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় অল্প অল্প করে প্রতিদিনই বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহের তুলনায় মুরগির দামও বেড়েছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে গরু এবং খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার (২ মে) পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শ্যামবাজার ও রায় সাহেব বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজিই এখন ৭০ টাকার উপরে। কম দামের মধ্যে পছন্দের কোনও সবজি মিলছে না। হাতে গোনা কয়েকটি সবজি এর ব্যতিক্রম। তার আবার চাহিদা কম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজির সরবরাহ প্রায় শেষ। গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ এখনও পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি। তাছাড়া নতুন করে আবার টোলের নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। ট্রলারে করে সবজি আনলে ঘাটে চাঁদা দিয়ে কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে যায়।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, করলা ৬৫-৮০ টাকা, বরবটি ও কচুর লতি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৯০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা।
অন্যান্য সবজির মধ্যে পেঁপে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা, শসা ৫০-৬৫ টাকা, পটোল ৫০-৬০ টাকা এবং শজনে ডাটা ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতিটি চালকুমড়া ৪০ টাকা, লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়।
শ্যামবাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল মাল বলেন, শীতকালীন সবজি এখন আর বাজারে নাই। আবার গ্রীষ্মের সব রকম সবজি এখনও বাজারে আসেনি। সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে। আলুর বিষয়ে বিক্রেতা বলেন, আলুর পর্যাপ্ত জোগান আছে। আমরা পাইকারিতে যে দামে কিনি, কেজিপ্রতি দুই বা তিন টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করি। শাকসবজির ভেতরে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি চাহিদা আলুর।
এদিকে গত এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগির দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পোল্ট্রি মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতা আজগর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত সপ্তাহে ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করেছি। তিন দিন আগে হঠাৎ পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে ১০ টাকা। তার ওপর চাহিদার তুলনায় জোগান কম। আমি দৈনিক যে পরিমাণ মুরগি আনি গত কয়েক দিনে সে পরিমাণ মুরগি পাচ্ছি না। আমার মতো এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী পাচ্ছে না। তাই মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে।
নয়াবাজার ও রায় সাহেব বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১৫-২০ টাকা বেশি। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-৩০ টাকা বেড়ে ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, লাল লেয়ার ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জাত ও আকার ভেদে প্রতি পিস হাঁসের দাম ৬০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩০০-৪০০ টাকা, কাতল ৩৫০-৪৫০ টাকা, চাষের কই ২০০-২৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২৩০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা শীতকালীন সবজি শেষ হওয়ার বাহানায় সিন্ডিকেট করে সবজির দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। রোজার মতো প্রতি মাসে যদি সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকতো তাহলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেতো।