সারা দেশে চলছে লম্বা ঈদের ছুটি। এ কারণে ঈদের চতুর্থ দিন মঙ্গলবারেও (১০ জুন) পুরোদমে জমে ওঠেনি রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো। বেশিরভাগ দোকানই রয়েছে বন্ধ। হাতে গোনা ক্রেতা থাকলেও সবজি ও মুরগির মাংসের দাম বেশ চড়া। মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা অপেক্ষা করছেন ক্রেতাদের জন্য। তারা প্রত্যাশা করছেন, আগামী শুক্রবার (১৩ জুন) বাজারে ক্রেতা বাড়তে পারে। মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে বাজারের এমন হালচাল দেখা গেছে।
বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি
ঈদের আগের তুলনায় এই বন্ধের মধ্যে বেশিরভাগ সবজির দাম রয়েছে বাড়তি। সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১২০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৫০ (হাইব্রিড), ৬০ (দেশি) টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে।
অর্থাৎ আজকের বাজারে প্রতি কেজিতে টমেটোর দাম বেড়েছে ৪০ টাকা, চায়না গাজরের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, লম্বা বেগুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, সাদা গোল বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, উচ্ছের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, করলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, কাঁকরোলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, মুলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ঢেঁড়সের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, পটোলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ধুন্দলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া প্রতি পিসে চাল কুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা এবং হালিতে কাঁচা কলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে।
তবে কমেছে কয়েকটি সবজির দাম। আজ প্রতি কেজিতে পেঁপের দাম কমেছে ২০ টাকা, কচুরমুখীর দাম কমেছে ১০ টাকা, কাঁচা মরিচের দাম কমেছে ১০ টাকা করে এবং প্রতি পিসে লাউয়ের দাম কমেছে ১০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ঈদের ছুটি এখনও শেষ হয়নি। তাই আমরা যেমন এখনও সেভাবে বাজারে দোকান খুলিনি, একইভাবে যেখান থেকে আমরা সবজি আনি, তারাও দোকান খোলেনি। এই কারণে মাল কম এসেছে। আর সবজির সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম কিছুটা বেশি। ছুটি শেষে সরবরাহ ঠিক হলেই দাম কমে যাবে আশা করি।
আরেক বিক্রেতা রাজিব বলেন, বন্ধের পর আজই শুরু করলাম। সবজিও বেশি আনিনি। কারণ কাস্টমার কম। কাস্টমার বাড়লে সবজি আরও বেশি আনবো। আশা করি শুক্রবার থেকেই কাস্টমার আসা শুরু করবে।
এদিকে বাজার করতে আসা এক ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, আসলে ঈদের পর বাজারে দাম একটু বেশিই থাকে। সরবরাহ কম থাকায় এমনটা হয়। আর এখন কারও (ক্রেতাদের) বেশি দরকার না হলে কেউ বাজারে আসে না। ছুটির আগেই বেশিরভাগ মানুষ বাজার করে নিয়েছে। আবার অনেকেই গ্রামের বাড়িতে আছে। সবাই চলে এলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
অপরিবর্তিত আদা-রসুন-পেঁয়াজের দাম
ঈদের আগের মতো ঈদের পরেও আদা, রসুন, পেঁয়াজের বাজার রয়েছে অপরিবর্তিত। বাড়েনি কোনও কিছুর দামই।
মঙ্গলবারের বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি নতুন ক্রস পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা। এর মধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ৫০ টাকা এবং বড় আকারের পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া আজকে প্রতি কেজি সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, লাল আলু ২০ টাকায়। বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজকে দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০-২০০ টাকা, চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাড়তি রয়েছে মুরগির মাংসের দাম
বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ও কক মুরগির মাংস। আবার আজকে থেকে দোকান খোলা শুরু করায় বেশিরভাগ দোকানে ছিল না লেয়ার ও দেশি মুরগি। বন্ধ ছিল গরু ও খাসির মাংসের দোকানগুলোও।
আজকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০-১৭৩ টাকা, কক মুরগি ২৭৫-২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৬২০-৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১১৫-১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৭-১৩ টাকা ও কক মুরগির দাম বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া দেশি মুরগি ও ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
মুরগির দোকানের বিক্রেতা মো. সুলতান বলেন, বাজার বন্ধ ছিল এই কয়দিন, আজকে থেকেই খুলেছি। অল্প কিছু মুরগি এনেছি। আমাদের আবার বিকাল থেকে বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। এখনও যেহেতু বাজার সেভাবে খুলেনি, তাই মুরগির কোনও দাম নির্ধারণ করে দেয়নি। আমরা যে দামে কিনেছি তার থেকে কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করছি।
এদিকে আজকের বাজারে আকার, ওজন ও মান অনুযায়ী ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭০০-২৪০০ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে রুই মাছের কেজি ৪০০ টাকা, কাতল মাছ ৪৫০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭৫০-৮০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ (চাষের) ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৭০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৫০০-১০০০ টাকা, চিতল মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বাতাসী মাছ ১২০০-১৪০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে মুদি দোকানের পণ্যের দাম
অন্য সময়ের মতো আজকেও মুদি দোকানের পণ্যের দামে আসেনি কোনও পরিবর্তন। সব পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। শুধু খোলা সরিষার তেলের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা।
আজকের প্রতি কেজি ছোট মসুর ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০-৭০০ টাকা, দারচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনি ১১৫ টাকা, খোলা চিনি ১১০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৯ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।