নগর ভবন ব্লকেড, স্থবির সেবা কার্যক্রম

বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা চার দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পর আজ নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। মূল ফটক আটকে নতুন এই কর্মসূচি পালন করায় দক্ষিণ সিটির সব ধরনের সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

সোমবার (১৯ মে) সকাল থেকে ডিএসসিসির নগর ভবন ব্লকেড ঘোষণা করে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগর ভবনের সামনে 'ঢাকাবাসী' ব্যানারে এসে জড়ো হন তারা। ব্লকেডের কারণে নগরভবনে সেবা প্রদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরেও ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যতদিন জনতার মেয়র ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে শপথ পাঠ করানো না হবে, ততদিন আমরা একইভাবে নগর ভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাবো এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। ইশরাককে মেয়র পদে শপথ না করালে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেওয়ার কথাও জানান এই বাসিন্দা।

এদিকে গত পাঁচ দিন ধরে নগর ভবনের সামনে কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। ফলে আজও নগর ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারছেন না সেবাগ্রহীতার। সে কারণে সেবাগ্রহীতাদের সেবা নিতে এসে ঘুরে যেতে হচ্ছে। পুরান ঢাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্দোলনকারীদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু তাদের কারণে আমরা সেবা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা স্বপরিবার দেশের বাইরে যাবো। তার আগে আমার ছোট মেয়ের জন্মনিবন্ধন নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। গত তিন দিন ধরে অনেক চেষ্টা করেও সেই সমস্যার সমাধান করতে পারছি না।

গত পাঁচ দিন ধরে নগর ভবনের সামনে কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা

এদিকে গত শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করা হয়েছিল। তাপস প্রভাব খাটিয়ে এই মামলা থামানোর চেষ্টা করেন। তখন আদালত আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সব আইনি পদক্ষেপ মেনে আমরা রায় পেয়েছি। কাজেই আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, তারা আদালত অবমাননা করছেন।

গেজেট প্রকাশের ২০ দিন পার হলেও তাকে শপথ করানো হয়নি জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা শপথ গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

গতকাল রবিবার (১৮ মে) স্থানীয় সরকার বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলেছে, ইশরাকের বিষয়ে মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে রিট আবেদনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত আসার পর।

এতে বলা হয়, ইশরাক হোসেনের রায়ের বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতি তুলে ধরে এবং শপথ আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ গত ২৮ এপ্রিল লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।

মো. মামুনুর রশিদ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের ২৭ মার্চের রায় ও ডিক্রি, নির্বাচন কমিশনের ২৭ এপ্রিল করা সংশোধিত গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। ওই রিট মামলায় ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে।

এছাড়াও প্রতারণামূলক রায় দেওয়ার জন্য নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাইকোর্টে রিট মামলা বিচারাধীন অবস্থায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী এমন আন্দোলন আদালতের প্রতি অনাস্থা অথবা অবমাননার শামিল। নাগরিক সেবা ব্যাহত ও অচলাবস্থা দূর করতে আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।

এদিকে ন্যায্যতার প্রশ্নে হলেও বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ন্যায্যতার প্রশ্নে হলেও ইশরাককে শপথ পড়াতে হবে। একই প্রক্রিয়া চট্টগ্রামের শাহাদাৎ, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পেলে তিনি পাবেন না কেন! আদালতের রায় নিয়ে ইচ্ছেকৃতভাবে জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ এই আইনজীবীর।

আরেক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ইশরাকের মেয়রের শপথের কোনও বাধা নেই। যেহেতু আদালতের রায়ের পর ইসি গেজেট প্রকাশ করেছে। স্বাধীন এই সংস্থা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে তাকে শপথ পড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, শপথ না পড়িয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনি পরামর্শ চাওয়ার নেপথ্যে ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ শপথ পড়ানো। আদালতের রায়ের পরও শপথ না পড়ানো দুঃখজনক।

ডিএসসিসির সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নগরভবন কেন্দ্রিক সব সেবাই বন্ধ। জোনাল অফিস কেন্দ্রিক সেবাগুলো গতকাল পর্যন্ত চালু থাকলেও আজ সেটিও বন্ধ। এ নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত না এলে জনগণের আরও বেশি ভোগান্তি হবে। সংশ্লিষ্ট যে তিনটি দফদর এর সঙ্গে যুক্ত তারা যদি এর সমাধান না দিতে পারে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।

এদিকে নগরভবনে কর্মরত অনেক কর্মচারী আজও ব্লকেড কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের বিষয়ে ডিএসসিসির এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সরকার ট্রেড ইউনিয়ন চালু করায় এই সুযোগ তারা পেয়েছেন। তবে তাদের কার্যক্রম আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। গেল ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন।